ডলার সংকটের মধ্যে প্রবাসী আয় দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা সামাল দিতে সাহায্য করছে, তবে রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা এখনো রয়ে গেছে। বৈধপথে টাকা পাঠানোর সময় উচ্চ চার্জের কারণে অনেক প্রবাসী এখন হুন্ডির দিকে ঝুঁকছেন।
তথ্য বলছে যে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি ব্যয়বহুল রেমিট্যান্স করিডরের মধ্যে তিনটিই বাংলাদেশের। বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বাড়াতে খরচ কমানো ছাড়া বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাপী অভিবাসন নিয়ে কাজ করা নোমাড-এর সাম্প্রতিক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে বিশ্বের সব অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় কম খরচে রেমিট্যান্স এসেছে।
তবে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, এ অঞ্চলে রেমিট্যান্স প্রেরণে খরচ বেড়েছে। এ অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচটি করিডরের খরচ ১১.৭ থেকে ১৩.৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। একই সময়ে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ করিডরে খরচ বেড়েছে ৪৬ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ বেশি। ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মালয়েশিয়া থেকে ভারতে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ যেখানে ২.২ শতাংশ, সেখানে মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ ছিল ১২.১ শতাংশ।
এছাড়া সিঙ্গাপুর থেকে ভারতে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ পড়েছে ২.৬ শতাংশ, অথচ সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ পড়েছে ১১.৭ শতাংশ।
এ পরিস্থিতি নিরসনের জন্য বৈধ চ্যানেলগুলোতে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ কমানোর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। প্রবাসীদের জন্য এই খরচ কমানো গেলে, বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো সম্ভব হবে, যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
এই সময়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে শ্রীলঙ্কায় রেমিট্যান্স প্রেরণে খরচ পড়েছে ২.৫ শতাংশ, এর বিপরীতে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রেরণে খরচ পড়েছে ১৩.৬ শতাংশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় রেমিট্যান্স প্রেরণের সবচেয়ে কম খরচের পাঁচটি করিডরের কোনোটিতে বাংলাদেশ নেই। অথচ এ অঞ্চলের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পাঁচটি করিডরের তিনটি বাংলাদেশের।
যদিও ডিজিটাল মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ অনেকটা কমেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ কমিয়ে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ডিজিটাল পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মের ব্যবহার বৃদ্ধি, উন্নত আর্থিক প্রযুক্তি এবং সরকারি উদ্ভাবনগুলো রেমিট্যান্স প্রেরণের খরচ কমাতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে প্রবাসীদের হুন্ডির মতো অবৈধ পথে না গিয়ে বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহিত করবে।