চলতি অর্থ বছরে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ

বাংলাদেশ সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে ৪ জুলাই জারি করা একটি নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে সকল মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আওতাধীন অধিদপ্তর, পরিদপ্তর, দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, পাবলিক সেক্টর করপোরেশন এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানির পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় বিদেশ ভ্রমণ এবং যানবাহন ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ, ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণ বন্ধ থাকবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় সীমিত আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে কিছু ক্ষেত্রে বিদেশ ভ্রমণ করা যাবে। এছাড়া, গ্যাস ও জ্বালানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশনায় উপ-সচিব মো. হেলাল উদ্দীন সই করেছেন। এ ধরনের পদক্ষেপগুলির উদ্দেশ্য হলো সরকারি ব্যয় কমানো এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে পূর্ণ সংহতি প্রকাশ জাতিসংঘের

নতুন অর্থবছরে সরকারের ব্যয়সংক্রান্ত কৃচ্ছ্রসাধনের নীতিমালা অনুযায়ী বিদেশ ভ্রমণের কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলিতে সীমিত অনুমোদন রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলি নিম্নরূপ:

  • শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে বিদেশ ভ্রমণ: সরকারি অর্থায়নে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, ও অন্যান্য দেশ কর্তৃক প্রদত্ত স্কলারশিপ বা ফেলোশিপের আওতায় মাস্টার্স ও পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নের জন্য।
  • বৈদেশিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ: বিদেশি সরকার, প্রতিষ্ঠান, বা উন্নয়ন সহযোগীর আমন্ত্রণে ও সম্পূর্ণ অর্থায়নে আয়োজিত বৈদেশিক প্রশিক্ষণে।
  • প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন (পিএসআই) এবং ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপট্যান্স টেস্ট (এফএটি): এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির জারি করা পরিপত্র কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে এবং একান্ত অপরিহার্য বিবেচনায় পিএসআই এবং এফএটি’র আওতায় বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

পরিচালন বাজেটের আওতায় ব্যয়

  • কোড নম্বর ৩৯১১১১১ ও ৪৯১১১১১ থেকে ব্যয় বন্ধ থাকবে।
  • এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
  • শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ও কৃষি মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট স্থাপনা ব্যতীত বন্ধ থাকবে। তবে চলমান নির্মাণ কাজ ন্যূনতম ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হলে অর্থবিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে।
  • সব ধরনের মোটরযান, জলযান, ও আকাশযান ক্রয়ে ব্যয় বন্ধ থাকবে। তবে ১০ বছরের অধিক পুরোনো টিওএন্ডইভুক্ত যানবাহন প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অর্থ বিভাগের অনুমোদনক্রমে ব্যয় করা যাবে।
  • এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় বন্ধ থাকবে।
আরও পড়ুন:  বাজেটে এবারও বরাদ্দ কমেছে গৃহায়ণ ও গণপূর্তে

উন্নয়ন বাজেটের আওতায় ব্যয়

  • এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ ব্যয় করা যাবে।
  • সব ধরনের মোটরযান, জলযান, ও আকাশযান ক্রয়ে ব্যয় বন্ধ থাকবে।
  • অধিগ্রহণ কার্যক্রমের সব আনুষ্ঠানিকতা প্রতিপালন করে অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।
  • পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে সংরক্ষিত এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে সংরক্ষিত জিওবির সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে।

পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে এবং মন্ত্রণালয়/বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে সংরক্ষিত জিওবি (Government of Bangladesh) এর সম্পূর্ণ অংশ অর্থ বিভাগের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে ব্যয় করা যাবে। অর্থাৎ, এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে হলে অর্থ বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে।

এই নীতির উদ্দেশ্য হলো উন্নয়ন বাজেটের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধনের প্রয়াসে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা এবং প্রয়োজনীয়তা ও অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অর্থ ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা।

আরও পড়ুন:  সন্তানের আত্মবিশ্বাস বাড়াবেন যেভাবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *