ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ এখন ১৬ বিলিয়ন ডলার

ঋণের তৃতীয় কিস্তি বাবদ ১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার) ছাড় ক‌রে‌ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহিবল (আইএমএফ)। এর সঙ্গে আরও কয়েকটি দাতা সংস্থার ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দীর্ঘদিন ধরে কমতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সর্বোচ্চ উঠেছিল ৪ হাজার ৮০০ কোটি ডলার (৪৮ বিলিয়ন)। সদ্য সমাপ্ত ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে, ৩০ জুন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮২ কোটি মার্কিন ডলারে (২৬.৮২ ‍বিলিয়ন)। আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ এখন দুই হাজার ১৮৪ কোটি ডলার (২১.৮৪ বিলিয়ন)।

এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়, প্রকাশ করা হয় না। তবে ঋণ সহায়তা পাওয়ার পর হঠাৎ দুই বিলিয়ন ডলারের বেশি রিজার্ভ বেড়ে যাওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে তাও জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে জানানো হয়, চলতি বছরের ৩০ জুন শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট ইন্টারন্যাশনাল রিজার্ভ (এনআইআর) বা ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ আছে এক হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার (১৬ বিলিয়ন ডলার)।

আরও পড়ুন:  মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ

প্রতি মাসে সাড়ে ৫ বিলিয়ন ডলার করে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন প্রান্তিক অবস্থানে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হলো বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ।

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন বাংলাদেশের জন্য ঋণের তৃতীয় কিস্তি অনুমোদন করে আইএমএফ।

আইএমএফ থেকে বাংলাদেশ মোট ঋণ নিচ্ছে ৪.৭০ বিলিয়ন ডলার। ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭৬.২৭ মিলিয়ন ডলার এসেছে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে। দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার আসে গত বছরের ডিসেম্বরে। মোট সাত কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করা হবে।

বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের চাপের মুখে পড়ে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় (রিজার্ভ)। বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে ক্রমাগত চলতি হিসাবের ঘাটতিও বেড়ে গিয়েছিল। ডলারের বিপরীতে টাকার দরের অবনমন হতে থাকলে প্রভাব পড়ে জ্বালানির দর ও আমদানিতে।

দ্রুত ক্ষয় হতে থাকা রিজার্ভ বাড়াতে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রার সহায়তা নিতে আইএমএফের কাছে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে ২০২২ সালের জুলাইতে। বিভিন্ন ধাপের আলোচনার পর ওই বছরের নভেম্বরে ঋণ চুক্তির অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।

আরও পড়ুন:  মার্কিন কংগ্রেসম্যান রাইসির দুর্ঘটনার খবরে ‘উচ্ছ্বসিত’

২০২৩ সা‌লের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করে বাংলাদেশ। তিনদিন পর প্রথম কিস্তিতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার  ছাড় করে সংস্থাটি। এরপর গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার কথা রয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির পরবর্তীগুলোতে সমান অর্থ থাকার কথা ছিল। কিন্তু  রিজার্ভ আরও কমে যাওয়ায় তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থ চায় বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে বেশ কিছু কঠিন শর্তের বাস্তবায়ন এবং আগামীতে আরও বড় সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সংস্থাটি তৃতীয় কিস্তিতে ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কো‌টি ৫০ লাখ ডলার দিতে সম্মত হয়। তবে মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ একই থাকবে।

চতুর্থ কিস্তির জন্য বাংলাদেশকে এ বছরের জুন শেষে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ১০ কোটি ডলার রাখতে বলা হয়েছিল। পরে বাংলাদেশের অনুরোধে তা কমিয়ে ১ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার (১৪.৭ বিলিয়ন) করা হয়। এখন বাংলাদেশের প্রকৃত রিজার্ভ যেহেতু ১৬ বিলিয়ন ডলার আছে, সেহেতু ঋণের ৪র্থ কিস্তি পেতে কোনো সমস্যা হবে না।

আরও পড়ুন:  হত্যার হুমকি পেয়ে যা বললেন ব্যারিস্টার সুমন

কীভাবে তৈরি হয় রিজার্ভ

রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায় তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশিকর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *