টাঙ্গুয়ার হাওর এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি

টাঙ্গুয়ার হাওর। ভ্রমণ পিপাসুরা একবার নয় এখানে কয়েকবার গিয়েছে কারণ এখানকার সৌন্দর্য কে খুব কাছে থেকে অনুভব করা যায়। কিন্তু যারা কোথাও খুব একটা ঘুরতে পছন্দ করেন না অথবা যাওয়ার সুযোগ হয় না তাদের জন্য এই টাঙ্গুয়ার হাওর এক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। টাঙ্গুয়ার হাওর গেলে একটা কথাই মনে হবে বারবার যে প্রকৃতি আসলেই অনেক সুন্দর।

বর্ষায় টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য বেড়ে যায় দ্বিগুণ। মেঘে ঢাকা আকাশ দেখে মনে হয় যেন স্পর্শ করা যাবে। তবে টাঙ্গুয়ার হাওর একেক মৌসুমে একেক রূপ ধারন করে। বর্ষাকালে আশপাশের ১৭৩টা হাওর মিলেমিশে একাকার হয়ে এটা হয়ে ওঠে আরেকটা সাগর, কী ঢেউ সেখানে। শীতকালে পানি কমে গিয়ে এখানে তৈরি হয় মাছেদের বিশাল মেলা। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পরিপূর্ণ দৃশ্য উপভোগ করার জন্যও টাঙ্গুয়ার হাওর দক্ষিণ এশিয়ার সেরা জায়গাগুলোর একটি। টাঙ্গুয়ার হাওর ইউনেসকো ঘোষিত রামসার সাইট, এখানে সকল প্রকার পাখি ও মাছ মারা নিষেধ। তাই এখানের জীববৈচিত্র্য অন্য সব জায়গার চেয়ে আলাদা। এখানে অনেকেই যান পাখি গুনতে, পাখির কলকাকলি শুনতে ও বিভিন্ন গবেষণার কাজে।

আরও পড়ুন:  ১০০ কোটির মাইলফলক ছুঁয়ে ফেলতে পারে শাকিবের বরবাদ

বর্ষাকালে ভিন্ন রূপ ধারণ করে টাঙ্গুয়া, হয়ে যায় সীমাহীন সাগরের মতো এক বিশাল জলাভূমি। নৌকা ভেড়ানোর জায়গাও তখন মেলে না সহজে, গ্রামগুলো হয়ে যায় একেবারে নির্জন দ্বীপের মতো। বর্ষাকাল আসলে উড়ে চলে যায় মঙ্গোলিয়া কিংবা হিমালয়ের দিকে। বর্ষাকালে হাওরের চারিদিকে পানিতে ভরপুর। আর আকাশে যেন মেঘেরা খেলা করে।

শীতকালে আনুমানিক ৩০ প্রজাতির পরিযায়ী বন্য হাঁস টাঙ্গুয়ার হাওরে অবস্থান করে। আপনি সহজেই স্থানীয় গ্রাম থেকে একটি ডিঙি নৌকা ভাড়া করে হাসের পালের কাছে যেতে পারেন তাদেরকে কোনোরূপ বিরক্ত না করে।শীতকালে আবার এখানে ফিরে আসে এবং আশ্রয় নেয় আগের তৈরি করা নীড়েই। আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় এই ঈগল হলো বাংলাদেশের সবচেয়ে জাদুকরী প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলোর একটি।

তবে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘোরার প্রকৃত সময়ে নাকি শীতকাল। তবে বর্ষাকালে এর যে অপরূপ সৌন্দর্য তা উপভোগ করার জন্য হলেও বর্ষাকালে একবার টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করা উচিত। সবসময় যে মৌসুম দেখেই ভ্রমণ করতে হবে এমন তো কোথাও বলা নেই। প্রকৃতির সৌন্দর্যকে কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য বর্ষাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে একবার হলেও যাওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:  কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে নাটক

কিভাবে যাবেন?

ঢাকা থেকে সুনামগঞ্জ : ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে যেকোনো বাস সরাসরি সুনামগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব নন-এসি বাসে জনপ্রতি টিকেট কাটতে ৬৫০-৭৫০ টাকা লাগে আর সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে প্রায় ছয় ঘন্টা সময় লাগে ।

সিলেটের কুমারগাঁও বাস স্ট্যান্ড থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লোকাল ও সিটিং বাস আছে। সিটিং বাস ভাড়া ১০০ টাকা, সুনামগঞ্জ যেতে দুই ঘন্টার মত সময় লাগবে। অথবা শাহজালাল মাজারের সামনে থেকে সুনামগঞ্জ যাবার লাইট গাড়ি তে ২০০ টাকা ভাড়ায় যাওয়া যায়।

সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর উপর নির্মিত বড় ব্রীজের কাছে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে সহজেই যাওয়া যায়। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে সাইজ এবং সামর্থ অনুযায়ী নৌকা ভাড়া করে বেড়িয়ে আসুন টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে। তবে শীতকালে পানি কমে যায় বলে আপনাকে লেগুনা/সিএনজি যেতে হবে সোলেমানপুর। সেখান থেকে নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন হাওড়ের উদ্দেশ্যে।

আরও পড়ুন:  নিজেকেই ভুলে যেতে চান মৌসুমী

কোথায় থাকবেন

টাঙ্গুয়ার হাওরে থাকার জন্য তেমন কোন ব্যবস্থা নেই । তবে যদি নৌকায় রাত কাটাতে চান তবে নিরাপত্তার জন্যে পাড়ের কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করুন। আর ঘর ভাড়া করতে চাইলে টেকেরঘাট এলাকায় হাওর বিলাশ নামে কাঠের বাড়িতে সল্প মূল্যে রুম ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *