আজ জাতীয় সংসদে বড় কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থ বিল উত্থাপন হচ্ছে। আগামীকাল রোববার চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের বাজেট পাস হবে, যা সোমবার থেকে কার্যকর হবে।
৬ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তৃতীয় অধিবেশনে আসন্ন অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করেন। বাজেট প্রস্তাবনায় উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বাজেটের অন্যতম আলোচিত প্রস্তাব ছিল ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। সংসদের ভেতরে-বাইরে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও প্রস্তাবে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের ওপর ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাবও অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের আপত্তি সত্ত্বেও, ৫০ লাখ টাকা লাভের ওপর কর আরোপের সিদ্ধান্ত বজায় থাকবে। এ কারণে পতনশীল বাজার আরো খারাপের দিকে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে, এবং বিভিন্ন পক্ষ এ কর বাতিলের দাবি জানালেও এনবিআর তা প্রত্যাহার করবে না বলে জানা গেছে।
বিরোধী দলের সদস্যরা প্রস্তাবিত বাজেটকে গতানুগতিক হিসেবে দেখছেন এবং অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুনত্ব না থাকায় সমালোচনা করেছেন।
জাতীয় সংসদে বাজেট নিয়ে আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “এটি একটা গতানুগতিক বাজেট। এতে নতুনত্বের কিছুই নেই। সেই কালো টাকা সাদা, সেই আয়-ব্যয়-রাজস্ব, নতুন কিছুই নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ বা জবাবদিহিতার কোনো অপশন নেই।”
নতুন অর্থ বিলে আয়কর ও কাস্টমস সংক্রান্ত কিছু পরিবর্তন আসছে। দেশী-বিদেশী উদ্যোক্তাদের চাপে এনবিআর বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর কর অবকাশ সুবিধা বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে। এসব অঞ্চলের কর অবকাশ সুবিধা এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলে স্থাপিত শিল্পের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি শুল্ক শূন্য শতাংশ রাখা হবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণের জন্য আমদানি করা যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করে ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। শিল্প স্থাপনের মূলধনি যন্ত্রপাতিতেও ১ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়। বিনিয়োগকারীদের জন্য শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিল করা হয়। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এসব সুবিধা বহাল থাকবে।
সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাবও টিকতে নাও পারে। বাজেট উত্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী কর প্রদানে উৎসাহিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সংসদ সদস্যদের চাপে প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন নাও হতে পারে।
সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে ভর্তুকি থেকে সরে আসার প্রয়াস দেখা গেছে। ঘাটতি বাজেটও ৫ শতাংশের ঘরে ধরে রাখা হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যও পূরণ হবে না। ৭ শতাংশ হলেও আমি খুশি।”
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, “সংসদের বাজেট আলোচনায় আমরা দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় অপচয়ের জৌলুস, গ্রামে বিদ্যুৎ নিয়ে মানুষের দুর্ভোগ এবং কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোয় বাধ্যতামূলকভাবে ডাক্তারদের নিয়োগের কথা বলেছি। সর্বোপরি একটি ধারাবাহিক বাজেট পাস হতে যাচ্ছে।”