গ্রামে লোডশেডিং না দিয়ে গুলশান-বনানী-বারিধারাসহ বিত্তশালীদের এলাকায় লোডশেডিং দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে ২০২৪-২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারপ্রধান এ নির্দেশনা দেন। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলে দিয়েছি, আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে, এখন এয়ারকন্ডিশন গাড়ি-বাড়িতে, লিফট ইত্যাদি আরাম-আয়েশটা আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং ওইসব বিত্তশালীদের এলাকায় দিতে হবে। এ ব্যবস্থাটাই করব আমরা।

উল্লেখ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত উন্নয়নে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০’ নামে বিশেষ আইন করেছে সরকার। যেটি ২০১০ সালের ৫৪ নং আইন হিসেবে চিহ্নিত। এই আইনের মেয়াদ ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সংশোধনীতে এই আইনকে ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন, ২০২১’ নামে অভিহিত করা হয়, যা ২০২১ সালের ২২ নং আইন নামে পরিচিত। এই আইনের মেয়াদ ১৬ বছর বাড়িয়ে ২০২৬ সাল পর্যন্ত করা হয়েছে। সরকার ক্ষমতাবলে এই আইনের মেয়াদ বাড়িয়েছে।

আরও পড়ুন:  ‘পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার আরেকটি পদক্ষেপ’

দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি, কারও রক্ষা নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছি, কারও রক্ষা নেই: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
অভিজাত এলাকায় লোডশেডিং দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লোডশেডিং! আমি বলে দিয়েছি আমার গ্রামে লোডশেডিং যেন না দেয়। গুলশান, বনানী, বারিধারা, এসব বড়লোকদের এলাকায় ২ হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিয়ে তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে, এখন এয়ারকন্ডিশন, গাড়ি, লিফট ইত্যাদি আরাম–আয়েশটা, এটা যে আসমান থেকে পড়েনি। এটা আমাদের করা, সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য অন্তত লোডশেডিং বিত্তশালীদের দিতে হবে। এই ব্যবস্থাটা আমরা করব।’

জ্বালানি তেল মজুত রাখার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ বছর জ্বালানি উন্নয়ন তহবিলে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে, এই ভর্তুকি ধীরে ধীরে কমাতে হবে। এ খাতে আমরা কেন ভর্তুকি দেব? বেশি বেশি এয়ারকন্ডিশন, ফ্রিজ, লিফট চলার জন্য দেব? তা তো দেব না।’

আরও পড়ুন:  বাংলাকে সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে যেটা করার দরকার সেটা করব। যে যত বেশি ব্যবহার করবে তাকে উৎপাদনের খরচটা অবশ্যই দিতে হবে। তবে আমরা হঠাৎ করে এটা করছি না। সহনশীল করে ধীরে ধীরে এটা করা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থা আমরা করছি। আমরা এলএনজিতে ভর্তুকি দিই। ভবিষ্যতে সেই ভর্তুকি দেওয়া হবে না।’

মেট্রোরেল নির্মাণের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে এই প্রকল্পের সমালোচকদের একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেলে ২ লাখ ৪০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন। কিছু অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী, মানে আঁতেল আরকি। বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করেন যাঁরা—তাঁরা বলেছিলেন, মেট্রোরেলের কী প্রয়োজন ছিল? ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ না করে মেট্রোরেল না করলেই চলত। এটা তো অপচয়। ৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে বাস কিনলেই তো যানজট ‍মুক্ত হবে। এই হলো বুদ্ধিজীবীদের বুদ্ধি! এখন মেট্রোরেল মানুষের জীবন বিশেষ করে মহিলাদের জন্য সব থেকে নিরাপদে চলাচলের সুযোগ করে দিয়েছে। বুদ্ধিজীবীরা এখন কী বলবেন সেটা আমার একটু জানতে ইচ্ছে করে। তাঁদের সঙ্গে দেখা হলে একটু জিজ্ঞাসা করতে পারতাম।’

আরও পড়ুন:  অনিবন্ধিত মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধের নির্দেশ

ফেনী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এটা হলে সাগরপাড় দিয়ে গাড়িতে করে একেবারে কক্সবাজার পৌঁছে যাবে। সেই ব্যবস্থা করার ইচ্ছে আমাদের আছে। এতে করে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শিল্পবাণিজ্য ও পর্যটন বিকশিত হবে।’

২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে শ্রেণিপেশা নির্বিশেষে বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এখানে রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, সকলেই এটাতে যুক্ত হতে পারেন। যেটা তাঁদের বয়সকালে সুরক্ষার ব্যবস্থা করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *