তৃতীয় ঋণের কিস্তির প্রস্তাব অনুমোদন বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ

মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের জন্য ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। এই অর্থ আগামী দুই দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়াশিংটনের হিসাবে স্থানান্তর করা হবে।

এর আগে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের প্রথম কিস্তির ৪৭৬ দশমিক ২৭ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশে এসেছে। এবং গত বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে প্রায় ৬৮১ মিলিয়ন ডলার দেশে প্রবেশ করেছে। এই ঋণ বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পে সহায়তা করবে।

কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে দেশের রিজার্ভের উপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়। এর সাথে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি এবং চলতি হিসাবের ঘাটতিও বৃদ্ধি পায়। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমতে শুরু করলে জ্বালানি এবং অন্যান্য আমদানির খরচ বেড়ে যায়, যা দেশের অর্থনীতির উপর আরও চাপ সৃষ্টি করে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য ২০২২ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ চেয়ে আবেদন করে। বেশ কিছু ধাপের আলোচনার পর, ২০২২ সালের নভেম্বরে আইএমএফ এই ঋণ চুক্তি অনুমোদন করে।

আরও পড়ুন:  স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন ম্যাটস শিক্ষার্থীদের প্রতি

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি, বাংলাদেশ আইএমএফের সঙ্গে এই ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং এর তিন দিন পর প্রথম কিস্তি হিসেবে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার ছাড় করা হয়। এরপর ১৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় কিস্তি হিসেবে ৬৮ কোটি ২০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে তৃতীয় কিস্তি হিসেবে ১ দশমিক ১১৫ বিলিয়ন ডলার ছাড় করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।

আইএমএফের সঙ্গে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সাতটি কিস্তিতে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ ছাড় করার চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিটি কিস্তির পরিমাণ সমান থাকার কথা ছিল। তবে বাংলাদেশের রিজার্ভের আরও হ্রাস পাওয়ায় এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তিতে বেশি অর্থের অনুরোধ করে।

আরও পড়ুন:  রেমালে ৩৫ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৩৭ লাখ মানুষ

https://dakdiyejai.news/

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আইএমএফের বেশ কিছু কঠিন শর্ত বাস্তবায়ন করেছে এবং আগামীতে আরও বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রমের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ফলে, আইএমএফ তৃতীয় কিস্তির জন্য পূর্বনির্ধারিত ৬৮ কোটি ডলারের পরিবর্তে ১১১ কোটি ৫০ লাখ ডলার ছাড় করতে সম্মত হয়েছে। তবে এই পরিবর্তন সত্ত্বেও মোট ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদ অপরিবর্তিত থাকবে।

বাংলাদেশের অনুরোধে চতুর্থ কিস্তির জন্য আগামী জুন শেষে নিট রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশশিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার কমিয়ে ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে। অনেক শর্ত পূরণ করার পথে থাকলেও ঋণ কর্মসূচি শুরুর পর থেকে রিজার্ভের ত্রৈমাসিক কোনো লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সরকারের অনুরোধে আইএমএফ পরে সংশোধন করে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট রিজার্ভ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

আরও পড়ুন:  দিল্লি নয়, ঢাকাতেই মিলবে অস্ট্রেলিয়ার ভিসা

বিপিএম-৬ হিসাবে (আইএমএফ নির্ধারিত হিসাব পদ্ধতি) ১৯ দশমিক ৫২ বিলয়ন। সেখান থেকে চলতি দায় বাবদ ৫ দশমিক ২৪ বিলিয়ন বাদ দিলে ব্যয়যোগ্য রিজার্ভ দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। যা আইএমএফের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্য ১৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন থেকে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলার কম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *