অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আফগানিস্তানের ইতিহাস

আফগানিস্তান আজ একটি ঐতিহাসিক জয় অর্জন করেছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, যা তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। সেন্ট ভিনসেন্টে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে আফগানিস্তান অস্ট্রেলিয়াকে ১৪৯ রানের লক্ষ্য দেয় এবং দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শন করে অস্ট্রেলিয়াকে ১২৭ রানে অলআউট করে ২১ রানে জয়লাভ করে।

গ্লেন ম্যাক্সওয়েল আবারও তার ব্যাটিং দক্ষতা প্রদর্শন করে ৫৯ রান সংগ্রহ করেন, তবে এইবার আফগান বোলারদের সামনে তার দানবীয় ইনিংস দীর্ঘায়িত হয়নি। সাম্প্রতিক ওয়ানডে বিশ্বকাপে ম্যাক্সওয়েলের ২০১ রানের অসাধারণ ইনিংস আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়াকে জিততে সাহায্য করেছিল, কিন্তু আজ আফগান বোলাররা তাদের দক্ষতা ও শৃঙ্খলার মাধ্যমে তাকে থামিয়ে দেয়।

এই ম্যাচে আফগানিস্তানের বোলারদের দাপটে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ দ্রুত ভেঙে পড়ে, যা তাদের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয় নিশ্চিত করে। এই জয় আফগানিস্তানের ক্রিকেটার ও সমর্থকদের জন্য বিশাল প্রেরণা ও গর্বের বিষয়।

আফগানিস্তানের অলরাউন্ডার গুলবদিন নাইব অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপকে ধসিয়ে দিয়ে দলের জয়ে মূল ভূমিকা পালন করেন। তিনি তার ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেছেন, যা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। গুলবদিন নাইব ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, টিম ডেভিড, এবং প্যাট কামিন্সকে আউট করেন।

আরও পড়ুন:  ‘তারেক রহমানের সঙ্গে স্কাইপিতে কথা বলতে চেয়েছিলেন সাকিব’

গুলবদিনকে যোগ্য সঙ্গ দেন আফগানিস্তানের অন্য বোলাররা। নাভিন উল হক প্রথম ওভারে ট্রাভিস হেডকে শূন্য রানে আউট করেন এবং তৃতীয় ওভারে অধিনায়ক মিচেল মার্শকে ফেরান। এরপর মোহাম্মদ নবী ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ডেভিড ওয়ার্নারকে আউট করেন, যার ফলে অস্ট্রেলিয়া ৩২ রানে ৩ উইকেট হারায়।

ম্যাক্সওয়েল এবং স্টয়নিসের ৩৯ রানের জুটি অস্ট্রেলিয়াকে কিছুটা আশা দিলেও গুলবদিনের বাউন্সারে ১১তম ওভারে স্টয়নিস আউট হন। টিম ডেভিডও গুলবদিনের বোলিংয়ে বেশি কিছু করতে পারেননি।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে টানা ৮ ম্যাচ জয়ের পর এই পরাজয় অস্ট্রেলিয়ার জন্য একটি বড় ধাক্কা।

আফগানিস্তান ইনিংসের শুরুটা দারুণ করে, যেখানে রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরান ওপেনিংয়ে ১১৮ রানের জুটি গড়েন। যদিও কঠিন উইকেটে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের সামনে খুব দ্রুত রান তুলতে পারেননি তারা, তবে এই জুটি দলকে শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করায়।

আরও পড়ুন:  তৃতীয় ঋণের কিস্তির প্রস্তাব অনুমোদন বাংলাদেশের জন্য আইএমএফ

এই জয়ে আফগানিস্তানের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পাবে এবং এটি তাদের ক্রিকেট ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন হিসেবে চিহ্নিত হবে।

আফগানিস্তান দারুণভাবে শুরু করলেও শেষের দিকে প্যাট কামিন্সের হ্যাটট্রিকের কারণে তাদের সংগ্রহ প্রত্যাশিতের চেয়ে কম হয়। রহমানউল্লাহ গুরবাজ এবং ইব্রাহিম জাদরানের ১১৮ রানের জুটি ৯৫ বলে গড়ে ওঠে। ইব্রাহিম জাদরান ৪৮ বলে ৫১ রান করেন এবং গুরবাজ ৪৯ বলে ৬০ রান করেন।

তবে শেষ ৫ ওভারে আফগানিস্তান মাত্র ২৯ রান করতে পারে। প্যাট কামিন্সের দুর্দান্ত বোলিং এর মূল কারণ। তিনি ১৮তম ওভারের শেষ বল এবং ২০তম ওভারের প্রথম দুই বলে উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিক করেন। কামিন্সের হ্যাটট্রিকের শিকার হন রশিদ খান, করিম জানাত, এবং গুলবদিন নাইব।

আরও পড়ুন:  সব স্তরে ডিমের দাম নির্ধারণ, কার্যকর কাল থেকে

কামিন্সের এই হ্যাটট্রিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টানা দুই ম্যাচে হ্যাটট্রিকের প্রথম উদাহরণ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এটি দ্বিতীয়, প্রথমটি ছিল ১৯৯৯ সালে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরামের শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টানা দুই টেস্টে হ্যাটট্রিক।

কামিন্সের এই হ্যাটট্রিকের ফলে আফগানিস্তানের বড় সংগ্রহের স্বপ্ন পূরণ হয়নি এবং তাদের ইনিংস ১৪৮ রানে শেষ হয়। এরপর আফগান বোলাররা অস্ট্রেলিয়াকে ১২৭ রানে গুটিয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক জয় নিশ্চিত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *