টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন শেষ হয়েছে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। সুপার এইটে জায়গা করাও বাংলাদেশের জন্য বড় অর্জন হলেও ভারতের বিপক্ষে হারে সেমিফাইনালের সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়।
অ্যান্টিগায় অনুষ্ঠিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৬ রান সংগ্রহ করে। বাংলাদেশের বোলাররা শুরুতে কিছুটা খরুচে ছিলেন এবং ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা ভালো স্কোর গড়ে তোলে। সাকিব আল হাসান ভারতীয় ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে ১১ বলে ২৩ রানে ফেরান। এই উইকেটের মাধ্যমে সাকিব প্রথম বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পঞ্চাশ উইকেট পূর্ণ করেন।
পাওয়ার প্লের ছয় ওভারে ভারত ৫৩ রান তোলে। বাংলাদেশের তানজিম হাসান সাকিব নিজের দ্বিতীয় ওভারে দুই উইকেট তুলে নেন, যার মধ্যে বিরাট কোহলি ২৮ বলে ৩৭ রান করেন।
বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নেমে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় এবং ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রানেই থেমে যায়। ফলে ভারত ৫০ রানের জয় পায়। সুপার এইটে বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়ার কাছেও হেরে যায়, যার ফলে টানা দুই হারের কারণে সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন ভেঙে যায়।
ভারতের ইনিংসে তানজিম হাসান এবং রিশাদ হোসেনের বোলিং পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো। তানজিম হাসান প্রথমে বিরাট কোহলিকে আউট করার পর এক বল পরেই সূর্যকুমার যাদবকে প্যাভিলিয়নে ফেরান। যাদব ছক্কা মারার পরের বলেই উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।
এরপর উইকেটে এসে কিছুটা থিতু হয়ে বাউন্ডারি মারতে শুরু করেন ঋষভ পান্ত। তবে রিশাদ হোসেনের বোলিংয়ে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মারার পর রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পান্ত। ২৪ বলে ৩৬ রান করেন তিনি। পান্তের আউট হওয়ার পর আক্রমণের দায়িত্ব নেন শিভাম দুবে, যিনি রিশাদের পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান। দুবে ২৪ বলে ৩ ছক্কা এবং ৩ চার মেরে ৩৪ রান করেন।
হার্দিক পান্ডিয়া ইনিংসের শেষ দিকে দারুণ ব্যাটিং করেন। মোস্তাফিজুর রহমানের শেষ ওভারে ১৮ রান তুলে নেন এবং মাত্র ২৭ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন। তানজিম হাসান ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন এবং রিশাদ হোসেন ৩৩ রান দিয়ে দুই উইকেট তুলে নেন।
এই পারফরম্যান্স সত্ত্বেও ভারতের স্কোর ১৫৬ রানের প্রতিরোধে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ যথেষ্ট ছিল না এবং বাংলাদেশ ১৪০ রানে থেমে যায়।
এই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন তানজিম হাসান, যার সংখ্যা ১১টি। তার সমান উইকেট নিয়েছেন রিশাদ হোসেনও। ২০২১ সালে সাকিব আল হাসানের ১০ উইকেটের রেকর্ড এতদিন ছিল সর্বোচ্চ।
রান তাড়ায় নেমে বাংলাদেশ ভালো শুরু করেছিল। চার ওভারে ২৭ রান করেন দুই ওপেনার। তবে পরের ওভারের তৃতীয় বলে উদ্বোধনী জুটি ভেঙে যায়। হার্দিক পান্ডিয়ার স্লোয়ার বলে ছক্কা হাঁকানোর পর লিটন দাস ক্যাচ দিয়ে আউট হন। পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ আর কোনো উইকেট হারায়নি এবং ৪২ রান করে।
তবে ১০ ওভারের মধ্যে আরও একটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কুলদ্বীপ যাদবের গুগলিতে এলবিডব্লিউ হন তানজিদ হাসান তামিম। রিভিউ নিয়েও তিনি আউট হন, ৩১ বলে ২৯ রান করেন তিনি।
বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসে ধারাবাহিক ব্যর্থতা তাদের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন শেষ করে দেয়। তানজিদ হাসান তামিম আউট হওয়ার পর পরের ওভারে কুলদ্বীপ যাদব তাওহীদ হৃদয়কে এলবিডব্লিউ করেন, হৃদয় ৬ বলে ৪ রান করেন। অধিনায়ক শান্ত এক প্রান্তে কিছু রান করছিলেন, তবে সাকিব আল হাসান আবারও ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন, ৭ বলে ১১ রান করে কুলদ্বীপের বলে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন।
অধিনায়ক শান্ত তার হাফ সেঞ্চুরির আগে ৩২ বলে ৪০ রান করে আর্শ্বদ্বীপ সিংয়ের বলে আউট হন। এই ম্যাচের একমাত্র পরিবর্তন জাকের আলি ৪ বলে ১ রান করে আউট হন, যা কোনো কাজে আসেনি। এরপর রিশাদ হোসেন উইকেটে এসে অক্ষর প্যাটেলকে দুটি ছক্কা হাঁকান, তবে বুমরাহর সামনে পুল করতে গিয়ে রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে ১০ বলে ২৪ রান করে আউট হন।
শেষদিকে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এক বল বাকি থাকতে ১৫ বলে ১৩ রান করে আউট হন। বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংস ধারাবাহিকভাবে ব্যর্থ হওয়ায় সুপার এইট থেকে তাদের বিদায় ঘটে।