ভারতে নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি শুধু দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ইঙ্গিতই দেয় না, বরং এটি আরও গভীর কূটনৈতিক এবং আঞ্চলিক পরিসরের প্রভাব নির্দেশ করে।
শেখ হাসিনার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিতি এবং মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে আবার ভারতে আগমন, দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্কের গভীরতা ও নির্ভরশীলতা আছে তা স্পষ্ট করে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই সম্পর্কের ভিত্তি শুধু মধুর সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক দিক দিয়েও এটি সুদৃঢ়।
এই দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পেছনে ইতিহাস রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান এবং শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই দুই দেশের সম্পর্ক মজবুত হয়ে উঠেছে। এই সম্পর্কের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
অন্যদিকে, চীনের সঙ্গেও বাংলাদেশের সম্পর্ক ক্রমশ মজবুত হচ্ছে। শেখ হাসিনার চীন সফর এর প্রমাণ। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের উন্নতি বাংলাদেশের জন্য অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই সম্পর্ক কখনোই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্বকে কমিয়ে দেয় না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বরাবরই ভারসাম্যপূর্ণ, যেখানে সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়।
ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছে। কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং বিজেপির কিছু আসন কমে যাওয়ায় বিরোধী দলগুলোও তৎপর হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ দুই দেশই তাদের নিজস্ব স্বার্থ বজায় রাখার পাশাপাশি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সহায়তা করতে পারে।
সার্বিকভাবে, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব কেবল ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর নির্ভর করে নয়, বরং বর্তমান প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রেক্ষাপটে এর তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক দিল্লি সফরে গান্ধী পরিবারের সঙ্গে পারিবারিক সম্পর্কের পুনরুজ্জীবন ঘটে। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী এবং প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ সেই সম্পর্কেরই ইঙ্গিত দেয়। এই সাক্ষাৎ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ঐতিহাসিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে।
তবে, সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানোর ঘটনা সেই মধুর সম্পর্কের উপর কিছুটা হলেও কালিমা লেপন করেছে। চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশের অভিযোগে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিহত হওয়া এবং সীমান্তে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া দু’দেশের সম্পর্কের জন্য উদ্বেগের কারণ।
এই সীমান্ত সমস্যাটি নতুন নয়, শতকের পর শতক ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। তবে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে, যখন শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদির মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে, তখন এই ধরনের ঘটনা সম্পর্কের উন্নয়নের পথে অন্তরায় হিসেবে দাঁড়াতে পারে।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে নতুন করে কথাবার্তা শুরু হওয়ার সম্ভাবনা এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট সমাধানে নেপাল ও ভারতের সহযোগিতার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। এসব ইতিবাচক দিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায়কে আরও উজ্জ্বল করতে পারে। কিন্তু সীমান্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং সীমান্তে চোরাচালান ও সন্ত্রাসের কারণে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠছে।
এই ধরনের সমস্যা সমাধানে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় এবং সংলাপ প্রয়োজন। সতর্কবার্তা এবং নন-লিথাল অস্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে প্রাণহানির সংখ্যা কমানো যেতে পারে। এছাড়াও, সীমান্ত এলাকার উন্নয়ন এবং চোরাচালান রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ইতিবাচক দিকগুলিকে আরও উন্নত করার পাশাপাশি সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও মজবুত হবে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে।
ভারত এবং তার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্কের বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং এর মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়া এবং তার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনর্বিবেচনার প্রেক্ষিতে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোচনার প্রয়োজন।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি
মালদ্বীপ: মালদ্বীপের নতুন শাসক দল এবং প্রেসিডেন্ট চীনপন্থী হওয়ায়, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। যদিও ভারত ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে বৈঠক হয়েছে এবং শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে তারা উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু ভারতীয় সেনাবাহিনী সরিয়ে নেওয়ার দাবি এবং আংশিক বাস্তবায়ন সম্পর্কের অবনতির ইঙ্গিত দেয়। চীনের প্রভাব এখানে দৃশ্যমান।
শ্রীলঙ্কা: শ্রীলঙ্কা চীনের ঋণে আবদ্ধ হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার কারণ হয়েছে। চীনের ঋণশোধে শ্রীলঙ্কার ভোগান্তি দেখা গেলেও চীনের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। চীনের প্রভাব এখানে সুস্পষ্ট।
মিয়ানমার: চীনের পরিকাঠামোগত সাহায্য এবং ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণ মিয়ানমারে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এই প্রভাব ভারতের জন্য উদ্বেগজনক।
ভুটান: ভুটানে ডোকলামের ঘটনার পর থেকে চীনের প্রভাব বাড়ছে। ভুটান ভারতের পররাষ্ট্রনীতির উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতির পথে এগোতে চাইছে, যা ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ।
নেপাল: নেপালে চীনের প্রভাব ও প্রতিপত্তি বেড়েছে। নেপালও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করতে চায়, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চীনও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চায় এবং শেখ হাসিনার চীন সফর এর প্রমাণ। তবে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকে নিরপেক্ষ ও স্বাধীন থাকার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি কোনো শক্তিধর রাষ্ট্রের বশংবদ না হয়ে স্বাধীনতার পক্ষে।
মূল্যায়ন ও ভবিষ্যৎ করণীয়: ভারতের উচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং চীনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক মজবুত করতে সংলাপ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য ভারতের উচিত বিদ্যুৎ, জলবণ্টন এবং অন্যান্য অর্থনৈতিক সহযোগিতায় আরও মনোযোগ দেওয়া। তিস্তা চুক্তি এবং বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা এগিয়ে নেওয়া উচিত। দক্ষিণ এশিয়ায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ভারতকে মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। চীনের প্রভাব মোকাবিলায় যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
সার্বিকভাবে, ভারতের উচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের মূল্যায়ন ও উন্নয়ন করা এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল গ্রহণ করা। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার, এবং এই সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করা ভারতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্ক বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। নরেন্দ্র মোদির তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রেক্ষিতে এই সম্পর্ককে নতুনভাবে মূল্যায়ন এবং উন্নয়ন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে, কিছু জটিলতা এবং জনগণের মধ্যে পুঞ্জীভূত অসন্তোষের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি হলো স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ থাকা। বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রাখতে চায়, যা ভারতের জন্য মেনে নেওয়া সহজ নয়। তবে, শেখ হাসিনার সরকারের এই পদক্ষেপকে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন করছে, এবং এটিকে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবে বিবেচনা করছে।
ভারতের তৎপরতা
ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়নে আরও তৎপর হতে চাইছে। সম্পর্কের মধ্যে যেসব জায়গায় জটিলতা আছে, সেগুলো সমাধানে নতুন উদ্যমে কাজ করার পরিকল্পনা করছে। তিস্তা চুক্তি, বাণিজ্য, এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি কিছু অসন্তোষ জমা হয়েছে, যা রাজনৈতিকভাবে বিএনপি এবং জামায়াত উসকে দিচ্ছে। অনেক বাংলাদেশি মনে করেন, ভারত বাংলাদেশের সার্বভৌম স্বার্থকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না। এই ধারণা থেকে ভারতের বিরুদ্ধে একটি পুঞ্জীভূত অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। সীমান্তে বিএসএফের গুলি চালানো এবং নিহতদের ঘটনা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। সীমান্ত সমস্যা সমাধানে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। বাণিজ্য সম্পর্কেও কিছু অসন্তোষ রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা মনে করেন, ভারত যথেষ্ট সুবিধা প্রদান করছে না।
সমাধানের পথ
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত সংলাপ এবং উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক আরও বাড়ানো উচিত। এই সংলাপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারতের প্রতি বিদ্যমান অসন্তোষ দূর করার জন্য জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। সাংস্কৃতিক বিনিময়, শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম এবং দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে। তিস্তা চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ইস্যু সমাধানে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে এবং সীমান্ত হত্যা কমাতে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে আরও ভালো সমন্বয় এবং সংলাপ প্রয়োজন। সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সক্রিয় সহযোগিতা করে আসছে। এই সহযোগিতা আরও বাড়ানো যেতে পারে এবং ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত।
ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং সম্পর্কের মজবুতি নিশ্চিত করা যায়। দুই দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি, যা কূটনৈতিক সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও দৃঢ় করবে।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে নতুন উদ্যমে কাজ করার উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও ভারত স্থলসীমান্ত চুক্তি এবং কভিড সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারপরও সম্পর্কের আরও উন্নতির জন্য অনেক কিছু করা প্রয়োজন। শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও এই বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে।
সীমান্তে সমস্যা ও এর প্রভাব : সীমান্তে অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং হিংসাত্মক ঘটনাগুলো ভারত ও বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এই সমস্যাগুলো কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও, কূটনৈতিক সম্পর্কের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ। দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ আলোচনা এবং সমস্যার দ্রুত সমাধান প্রয়োজন।
পরামর্শ এবং করণীয়: সীমান্ত সমস্যা সমাধানে দুই দেশের স্বরাষ্ট্র এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ আয়োজন করা উচিত। এতে সমস্যাগুলো দ্রুত নিরসনের পথ খুঁজে পাওয়া যাবে। সীমান্তে শান্তি বজায় রাখতে দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় এবং সহযোগিতা বাড়ানো প্রয়োজন। নিয়মিত যৌথ মহড়া এবং তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে চোরাচালান ও অনুপ্রবেশ রোধ করা যেতে পারে। সফট ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সম্পর্ক আরও উন্নত করা যেতে পারে। সাংস্কৃতিক বিনিময়, যৌথ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পর্কের ভিত্তি আরও মজবুত করা যেতে পারে। যৌথ বিনিয়োগ প্রকল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক সুযোগের প্রসার দুই দেশের জন্য লাভজনক হতে পারে। সীমান্ত এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশের সমস্যা কমানো যেতে পারে। স্থানীয় জনগণের জীবিকা উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।
ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নয়ন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য যৌথ উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। সীমান্ত সমস্যার দ্রুত সমাধান এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কের উন্নতির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অসন্তোষ দূর করা সম্ভব। এই প্রেক্ষাপটে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারতের নতুন উদ্যম এবং শেখ হাসিনার সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সুদৃঢ় সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করা যাবে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়নে সহায়ক হবে।
ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম