বন্যা এবং জলাবদ্ধতার কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিষধর রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে গেছে, যা মানুষের জীবনকে অতিরিক্ত ঝুঁকিতে ফেলেছে। রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গত দশকে ২৩৫ জন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে আক্রান্ত হয়েছেন, যার মধ্যে ৫৯ জন মারা গেছেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই সাপ ডাঙ্গায় বা শুষ্ক জায়গায় আশ্রয় নেয় এবং মানুষের সংস্পর্শে এলে কামড়ায়।
রাসেলস ভাইপার: রাসেলস ভাইপার একটি অত্যন্ত বিষধর সাপ এবং এর কামড়ে মৃত্যু ছাড়াও শারীরিক পঙ্গুত্ব, অঙ্গহানি এবং দীর্ঘমেয়াদী আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকদের মতে, বর্ষার সময় এই সাপগুলো উঁচু ও শুষ্ক স্থান খুঁজে থাকে, যেহেতু বন্যার পানিতে তারা তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল হারায়। ফলে তারা মানুষের বাড়িঘর, রাস্তা, জমির আইল, কবরস্থান, কাঠের স্তূপ, খড়ের গাদা ইত্যাদিতে আশ্রয় নেয়।
অঞ্চলে সমস্যা: বর্তমানে রাসেলস ভাইপার দেশের অন্তত ২৫টি জেলায় পাওয়া যাচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর প্রচলন বেশি হলেও এখন চাঁদপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, শরীয়তপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ছড়িয়ে পড়েছে। এই সাপের কামড়ে বিশেষ করে কৃষক এবং জেলেরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। রাজধানী ঢাকার পাশের জেলা মানিকগঞ্জে গত তিন মাসে পাঁচজন রাসেলস ভাইপারের কামড়ে মারা গেছেন।
প্রতিরোধ ও সতর্কতা: সাপের কামড়ের পরপরই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা নেওয়া উচিত। প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং হাসপাতালে গিয়ে অ্যান্টি-ভেনম দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যেসব জায়গায় সাপ আশ্রয় নিতে পারে, যেমন কাঠের স্তূপ, খড়ের গাদা, এগুলো নিয়মিত পরিস্কার করতে হবে। রাতে চলাফেরার সময় আলোর ব্যবস্থা রাখা এবং পা ঢেকে রাখার জন্য বুট বা জুতা পরিধান করা উচিত। সরকারকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করতে হবে এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকর প্রচারণা চালাতে হবে।
রাসেলস ভাইপার, পৃথিবীর বিষধর সাপের মধ্যে পঞ্চম স্থানে থাকলেও, এর আক্রমণাত্মক প্রকৃতি এবং হিংস্রতা পৃথিবীর শীর্ষে। এই সাপ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আক্রমণ করতে সক্ষম এবং এর কামড়ের প্রক্রিয়া এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে সম্পন্ন হয়। এর কামড় থেকে বাঁচতে এবং ক্ষতি কমাতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসেলস ভাইপার কামড়ের লক্ষণ ও প্রতিকার
অস্বাভাবিক ফোলা: কামড়ানোর স্থানটি দ্রুত ফুলে ওঠে।
জ্বালাপোড়া ও পচন: কামড়ানোর স্থানে তীব্র জ্বালা এবং পচন দেখা দিতে পারে।
রক্ত জমাট বাঁধা: শরীরের ভেতরে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে।
কিডনি সমস্যা: কিডনি অকেজো হতে শুরু করে।
শক ও প্যারালিসিস: শক এবং পেশি প্যারালিসিস হতে পারে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল রক্তক্ষরণ: অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ হতে পারে।
জরুরি পদক্ষেপ: সাপের কামড়ের পরপরই নিকটস্থ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হবে। অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে। তবে, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ওঝার শরণাপন্ন হওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি সময় নষ্ট করে এবং কার্যকরী চিকিৎসা পেতে দেরি হয়।
সাপ চিহ্নিতকরণ: সাপের কামড়ানোর পর, যদি সম্ভব হয়, সাপটির ছবি তুলে রাখতে পারেন। এটি চিকিৎসক এবং স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের সাহায্য করতে পারে সঠিক অ্যান্টিভেনম প্রয়োগে।
সাবধানতা অবলম্বন: রাতে চলাফেরার সময় আলো ব্যবহার করুন। পা ঢেকে রাখার জন্য বুট বা জুতা পরিধান করুন। বসবাসের আশেপাশে সাপের আশ্রয়স্থল পরিষ্কার রাখুন।
সচেতনতা বৃদ্ধি: সাপের কামড়ের প্রতিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারকে সাপের কামড়ের চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য করতে হবে এবং বিভিন্ন স্তরে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞদের মতামত:
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাসান তারিক বলেন, রাসেলস ভাইপারের দংশনের পর দ্রুত কিডনি সমস্যা এবং শরীরের অন্যান্য জটিলতা শুরু হয়। তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা না নিলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।
ফা-তু-জো খালেক মিলা (জোহরা মিলা) বলেন, সাপের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার পর ওঝার কাছে না গিয়ে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে এবং সঠিক অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করতে হবে।
রাসেলস ভাইপার কামড়ানোর পর জরুরি পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। সতর্কতা অবলম্বন এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
রাসেলস ভাইপার – পৃথিবীর বিষধর সাপের মধ্যে পঞ্চম স্থানে থাকলেও, এর আক্রমণাত্মক প্রকৃতি এবং হিংস্রতা পৃথিবীর শীর্ষে। এই সাপ অত্যন্ত দ্রুতগতিতে আক্রমণ করতে সক্ষম এবং এর কামড়ের প্রক্রিয়া এক সেকেন্ডের ১৬ ভাগের ১ ভাগ সময়ে সম্পন্ন হয়। এর কামড় থেকে বাঁচতে এবং ক্ষতি কমাতে কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রাসেলস ভাইপার কামড়ানোর পর জরুরি পদক্ষেপ এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব। সতর্কতা অবলম্বন এবং দ্রুত চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম