দুআ কবুল হওয়ার বিশেষ কিছু মুহূর্ত

প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি কর্মে বান্দা আল্লাহর সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তাঁর সাহায্য ছাড়া বান্দার কোনো কাজই সফলতার মুখ দেখে না। আর আল্লাহর মদদ ও সাহায্য লাভের বড় একটি মাধ্যম হলো দুআ। দুআ করলে আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। বান্দাকে সাহায্য করেন, প্রার্থিত বস্তু দান করেন। বান্দার আশা পূরণ করেন।

যদি রিযিক হালাল হয়, একাগ্রতার সাথে দুআ করা হয় এবং দুআ করার পর ফলাফলের জন্য তাড়াহুড়া না করা হয়, তাহলে আল্লাহ তাআলার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, তিনি অবশ্যই দুআ কবুল করবেন। ইরশাদ হয়েছে : তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো; আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। নিশ্চয়ই অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (সূরা মু’মিন : ৬০)।

সুতরাং দুআ কবুল করার ব্যাপারে আল্লাহর ওয়াদা রয়েছে। এতে সময়, স্থান ও অবস্থার কোনো ভেদাভেদ নেই। বান্দা যে অবস্থায় এবং যে সময়ই বিনয়ের সাথে আল্লাহর দিকে রুজু হয় এবং কায়মনোবাক্যে তাঁর নিকট নিজের আরজি পেশ করে, আল্লাহ তাআলা তা শোনেন এবং কবুল করেন।

দুআ কবুলের এই প্রতিশ্রুতি দয়াময় আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ। এই অনুগ্রহকে তিনি আরো বৃদ্ধি করেছেন- দিন-রাতের বিশেষ কিছু অংশকে সম্মানিত করেছেন এবং সে সময়গুলোতে দুআ কবুলের অতিরিক্ত আশ্বাস দিয়েছেন। ফলে এসব মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে আমরা আরো বেশি উপকৃত হতে পারি এবং আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে নিজের প্রয়োজন চেয়ে নিতে পারি।

আরও পড়ুন:  বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা

দিন ও রাতের বিভিন্ন অংশে দুআ কবুলের কথা বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন : ফরয নামাযের শেষে। আবু উমামা (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে প্রশ্ন করলাম : হে আল্লাহর রাসূল! কোন্ সময়ের দুআ সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? নবী (সা.) উত্তরে বললেন : রাতের শেষ প্রহরে এবং ফরয নামাযের শেষে। (জামে তিরমিযী : ৩৪৯৯)। এই হাদিস থেকে জানা যায়, দুই সময়ে দুআ অধিক কবুল হয়। একটি হলো, ফরয নামাযের শেষে দুআ করা। ফরয নামাযের শেষে দুআ করলে তা কবুল করা হয়। তাই নবী কারীম (সা.) গুরুত্বের সঙ্গে সে সময় দুআ করতেন।

এখানে একটা বিষয় খোলাসা হওয়া দরকার। তা হলো, হাদিসটিতে ফরয নামাযের শেষে দুআ কবুলের আশ্বাস দেয়া হয়েছে। ‘নামাযের শেষে’ বলে কোন্ সময় বোঝানো হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর হলো- মুহাদ্দিসীনে কেরাম এর দুটি ব্যাখ্যা করেছেন।

আরও পড়ুন:  কেন্দ্রীয় আ.লীগের উপ-কমিটির সদস্য হলেন সালাউদ্দিন বিপ্লব

১. নামাযের শেষাংশ তথা সালাম ফেরানোর পূর্বের সময়। নামাযের শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ ও দরূদ শরীফ পড়ার পর এবং সালাম ফেরানোর আগে যে সময় আমরা প্রসিদ্ধ দুআ মাছূরা পড়ি সে সময় দুআ করা।

২. নামায শেষ করার পর তথা ফরয নামাযের সালাম ফেরানোর পরে দুআ করা। উভয় ব্যাখ্যা হাদিস শরীফ দ্বারা সমর্থিত। উভয় সময়েই দুআ করার বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) গুরুত্ব দিয়েছেন, উম্মতকে এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন এবং সে সময় পড়ার জন্য সুসংক্ষিপ্ত ও মর্মসমৃদ্ধ অনেক দুআ তিনি শিক্ষা দিয়েছেন। যাহোক, হাদিসটি থেকে জানা গেল, নামাযের শেষে তথা সালাম ফেরানোর আগে এবং সালাম ফেরানোর পর দুআ কবুল হওয়ার বিশেষ একটি সময়।

উপরে আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, দুই সময়ের দুআ অধিক কবুল হয়। একটি হলো : রাতের শেষ প্রহরে। (জামে তিরমিযী : ৩৪৯৯)। বিষয়টি আরো একাধিক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। এক হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেছেন : জনৈক সাহাবী নবী (সা.)-কে জিজ্ঞেস করলেন, রাতের কোন্ সময়টিতে দুআ করলে অধিক কবুল হয়? নবী (সা.) বলেছেন : রাতের শেষ সময়। (মুসনাদে বায্যার : ৬১৬৭)।

আরও পড়ুন:  সপরিবারে মান্নাত ছাড়ছেন শাহরুখ

এসব হাদিস থেকে স্পষ্ট যে, রাতের শেষ অংশ দুআ কবুলের গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর তা হবেই না কেন, তখন যে আল্লাহ তাআলার রহমত ও মাগফেরাতের দুয়ার খুলে যায় এবং তাঁর দয়া ও দানের সাগরে জোয়ার আসে! ওই সময় আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দান করেন। বান্দার দুআ কবুলের জন্য, বান্দার প্রয়োজন পূরণ করার জন্য এবং বান্দাকে ক্ষমা করার জন্য তিনি ডাকতে থাকেন।

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমাদের রব আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতাআলা প্রত্যেক রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন, কেউ আছে কি, আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কেউ আছে কি, আমার কাছে (প্রয়োজনাদি) চাইবে, আমি তাকে দান করবো! কেউ আছে কি, আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব! (সহীহ বুখারী : ১১৪৫)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *