ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ সারা দেশের মানুষের জন্য এক বিরাট উৎসবের উপলক্ষ হলেও সন্দ্বীপের মানুষের জন্য এটি একধরনের আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ সন্দ্বীপে আসছেন ঈদ উদযাপন করতে। এ সময় যাত্রাপথের বিপদ এবং সাগরের দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি নিয়ে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করে।

ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা, দুটি ইসলামী উৎসব যা বাংলাদেশে ব্যাপক উৎসাহ এবং উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়। ঈদের সময় বাংলাদেশের শহরগুলোতে কর্মরত অসংখ্য মানুষ গ্রামে, তাদের পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে ফিরে যান। কিন্তু, এই যাত্রা অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং এতে কিছু শঙ্কা থাকে। সন্দীপের মানুষের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম নয়। সন্দীপ একটি দ্বীপাঞ্চল হওয়ায় এখানে মানুষের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়।

পরিবহন ব্যবস্থা: সন্দীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে আসার পর, শহর বা গ্রামে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকলে যাত্রা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। ঈদের সময় সারা দেশে যাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, যার ফলে সড়ক ও নৌপথে অতিরিক্ত ভিড় এবং যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রার সময় বাড়ে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।

স্বাস্থ্যঝুঁকি: ভিড়ের মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে যাত্রা করার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে যদি যাত্রীরা যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে না পারেন।

এই শঙ্কাগুলো কাটিয়ে ঈদের সময় নিরাপদে যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যাত্রীদেরও সচেতন থেকে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন:  ৪৩তম বিসিএসের নন-ক্যাডার তালিকা প্রকাশের নির্দেশ
ছবি - সংগ্রহীত - dakdiyajai.news
ছবি – সংগ্রহীত – dakdiyajai.news

সন্দ্বীপের মানুষের নদী পারাপারের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কাজ করছে। বিআইডব্লিউটিএ সন্দ্বীপবাসীর যাত্রা নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

ফেরি ও নৌযান সেবা উন্নয়ন: বিআইডব্লিউটিএ আধুনিক ও নিরাপদ ফেরি এবং নৌযান পরিচালনা করছে, যা সন্দ্বীপবাসীর যাত্রা আরও সুবিধাজনক ও নিরাপদ করে তুলছে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা বৃদ্ধি: যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিআইডব্লিউটিএ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, যেমন নৌযানে লাইফ জ্যাকেটের ব্যবস্থা, নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণ, এবং যাত্রীদের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম।

টেকসই পরিকাঠামো নির্মাণ: যাত্রীবাহী টার্মিনাল ও অন্যান্য সুবিধা উন্নত করা হচ্ছে, যাতে সন্দ্বীপের মানুষের যাত্রা আরো সুগম ও স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।

জরুরি সেবা: যেকোনো দুর্যোগ বা বিপদের সময় দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য জরুরি সেবা ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে বিআইডব্লিউটিএ সন্দ্বীপবাসীর নদী পারাপারকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছে। তবে, আরও অনেক উন্নয়ন এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে সন্দ্বীপের মানুষদের আতঙ্কমুক্ত, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যময় যাত্রা নিশ্চিত করা যায়।

ছবি - সংগ্রহীত - dakdiyajai.news
ছবি – সংগ্রহীত – dakdiyajai.news

সন্দীপের মানুষদের যাত্রার ভোগান্তি নিয়ে কিছু নির্দিষ্ট সমস্যা রয়েছে যা বিশেষত ঈদের সময় আরও তীব্র হয়ে ওঠে। এই সমস্যা গুলোকে কেন্দ্র করে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনা করা যায়:

আরও পড়ুন:  সন্দ্বীপ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

নৌপথে সমস্যা: সন্দীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের জন্য নৌযানই প্রধান মাধ্যম। কিন্তু যাত্রীর চাপ বৃদ্ধির ফলে নৌযানগুলোর ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করতে হয়, যা ঝুঁকিপূর্ণ। সন্দীপে প্রয়োজনের তুলনায় নৌযানের সংখ্যা কম। এর ফলে অনেক সময় যাত্রীদের দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়, যা ভোগান্তির প্রধান কারণ।

আবহাওয়াজনিত সমস্যা: বর্ষাকাল এবং অন্যান্য দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে নৌযাত্রা ব্যাহত হতে পারে। বিশেষ করে মৌসুমি ঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসের সময় যাত্রা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়।

যাত্রীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি: নৌযানে যাত্রীদের ভিড়ের কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বসে বা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যা শারীরিক অসুবিধার কারণ হতে পারে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ এবং শিশুদের জন্য এই ভিড় অত্যন্ত কষ্টকর।

সড়কপথের সমস্যা: সন্দীপ থেকে মূল ভূখণ্ডে আসার পর, শহর বা গ্রামে যাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা না থাকলে যাত্রীরা আরেক দফা ভোগান্তির সম্মুখীন হন।

ট্রাফিক জ্যাম: ঈদের সময় সারাদেশেই সড়কপথে ব্যাপক যানজট দেখা যায়। এতে যাত্রার সময় অনেক বেশি বেড়ে যায় এবং যাত্রীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন।

নিরাপত্তা সমস্যা: অতিরিক্ত যাত্রী ও ভিড়ের কারণে যাত্রাপথে চুরি এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

আর্থিক ভোগান্তি: ঈদের সময় নৌযান ও সড়কপথে ভাড়া বেড়ে যায়, যা সাধারণ মানুষের জন্য আর্থিকভাবে কষ্টকর হয়ে ওঠে।

ছবি - সংগ্রহীত - dakdiyajai.news
ছবি – সংগ্রহীত – dakdiyajai.news

সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত নৌযানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সড়কপথে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়াতে হবে। যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যেন তারা অতিরিক্ত যাত্রীবাহী নৌযানে যাত্রা না করেন এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন।

আরও পড়ুন:  আজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি

এসব ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সন্দীপের মানুষদের ঈদের সময় যাত্রার ভোগান্তি কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। সন্দ্বীপের মানুষের এ আতঙ্ক কবে দূর হবে, তা এখনই বলা মুশকিল। তবে আমরা আশা করি, একদিন সন্দ্বীপের মানুষের জন্য ঝুঁকিহীন এবং নিরাপদ যাত্রা সম্ভব হবে। প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সরকারী উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান হবে এবং সন্দ্বীপের মানুষ নিশ্চিন্তে এবং নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন। এবং সেই দিনটির অপেক্ষায় আমরা সবাই আছি, যখন সন্দ্বীপবাসীসহ সবার যাত্রা হবে নিরাপদ, নির্বিঘ্ন এবং আনন্দময়।

 

ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

tags – ঈদে ঘরে ফেরার  – এক বিরাট উৎসবের উপলক্ষ

সন্দ্বীপ  – উত্তাল সাগর পাড়ি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ সন্দ্বীপে আসছেন – ঈদ উদযাপন  – যাত্রা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *