মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য রক্তদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ও নিঃস্বার্থ উপহার হলো রক্তদান। মুমূর্ষু রোগীকে বাঁচাতে প্রায়ই জরুরি ভিত্তিতে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়।

বিশেষ করে থ্যালাসেমিয়া রোগী যারা রক্তের ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন খাদ্যের প্রয়োজন ঠিক, এদের বেঁচে থাকার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন প্রতি মাসে এক বা একাধিক রক্তের ব্যাগ। নিয়মিত রক্তদান করা একটি ভালো অভ্যাস। রক্তদান (Blood Donation) করা কোনো দুঃসাহসিক বা স্বাস্থ্যঝুঁকির কাজ নয়।

রক্তদান প্রক্রিয়াটি সাধারণত সহজ এবং নিরাপদ। সাধারণত একটি ব্যাগ রক্তে ৪৫০-৫০০ মিলিলিটার থাকে, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মোট রক্তের পরিমাণের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। রক্তদান করার পর শরীর দ্রুতই এই রক্তের অভাব পূরণ করে নেয়, ফলে রক্তদাতার কোনো দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয় না। রক্তদানের মাধ্যমে কেবল রোগীর জীবন বাঁচানো হয় না, রক্তদাতার নিজস্ব স্বাস্থ্যও উপকৃত হতে পারে। নিয়মিত রক্তদান করলে শরীরের আয়রন লেভেল নিয়ন্ত্রিত থাকে, যা বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

রক্তদানের আগে এবং পরে প্রচুর পানি পান করা উচিত। রক্তদানের পর ভারী শারীরিক পরিশ্রম থেকে বিরত থাকা ভালো। রক্তদানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে হালকা খাবার খাওয়া উচিত। রক্তদান নিয়ে অনেকের মনে নানা প্রশ্ন ও সংশয় থাকে। আসুন, এসব প্রশ্নের উত্তর বিস্তারিতভাবে জেনে নেই:

আরও পড়ুন:  ভারতে ভূমিকম্প, দেশের বিভিন্ন স্থানেও অনুভূত

১. রক্তদানকারী ব্যক্তির শরীরে হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেটের মাত্রা কী হওয়া উচিত?

হিমোগ্লোবিন: নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শরীরে কমপক্ষে ১২ গ্রাম হিমোগ্লোবিন থাকা প্রয়োজন।

প্লেটলেট: প্লেটলেটের সংখ্যা ১.৫ লাখের উপরে হওয়া উচিত।

২. রক্তদানের পর কি শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়?

না, রক্তদানের পর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা তেমন কমে না। রক্তদানের পর শরীরে দ্রুত নতুন রক্তকণিকা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়, ফলে রক্তের অভাব পূরণ হয়ে যায়।

৩. রক্তদান এবং প্লেটলেট দানের মধ্যে পার্থক্য কি?

রক্তদানের সময় পুরো রক্ত নেওয়া হয়, যার মধ্যে রক্তের সব উপাদান থাকে। প্লেটলেট দানের সময় শুধুমাত্র প্লেটলেট আলাদা করে নেওয়া হয় এবং বাকী রক্ত দাতার শরীরে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। প্লেটলেট দানের জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়।

৪. সাধারণত একজন সুস্থ মানুষ কত দিনের ব্যবধানে রক্ত বা প্লেটলেট দান করতে পারে?

প্লেটলেট দান: ৫-৭ দিন পর।

রক্ত দান: ২০ দিন পর।

৫. রক্ত দেওয়ার পর কি আপনি দুর্বল বোধ করেন?

সাধারণত রক্ত দেওয়ার পর দুর্বলতার কোনো সম্পর্ক নেই। তবে কিছু মানুষ রক্ত দেখে ঘাবড়ে যায়, মানসিক প্রভাবে মাথা ঘোরা শুরু করে। এই সমস্যা এড়াতে রক্ত দানের পর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া এবং কিছু হালকা খাবার ও জুস পান করা উচিত।

আরও পড়ুন:  বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে সিলেটের সব নদ-নদীর পানি

৬. রক্তদানের আগে পরীক্ষায় কি কি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?

রক্তদানের আগে রক্তদাতার নাড়ির হার, শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ, চিনির মাত্রা, হৃদস্পন্দন এবং ফুসফুসের সাধারণ পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া কোনো ক্ষত বা সংক্রমণ নেই কিনা তা দেখা হয়।

৭. নিরামিষাশীরা কি রক্ত দেওয়ার পরে আরও দুর্বল বোধ করেন?

এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। সুষম নিরামিষ খাবারও পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করে, যা রক্তদাতার দুর্বলতার কারণ নয়।

৮. রক্তদানকারী ব্যক্তির ওজন কত হওয়া উচিত?

মহিলা: ৪৫ কেজি বা তার বেশি।

পুরুষ: ৫০ কেজি বা তার বেশি।

৯. একজন মহিলা কি পিরিয়ডের সময় রক্ত দিতে পারেন?

হ্যাঁ, যদি পরীক্ষার পর তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হন, তবে তিনি পিরিয়ডের সময়ও রক্ত দিতে পারেন।

১০. যারা সিগারেট এবং অ্যালকোহল সেবন করেন তারা কি রক্ত দিতে পারেন?

যারা সীমিত পরিমাণে সিগারেট বা অ্যালকোহল সেবন করেন, তারা রক্ত দিতে পারেন। তবে প্রি-ডোনেশন চেক-আপের পর ডাক্তার এই সিদ্ধান্ত নেন।

১১. যারা ভারী শারীরিক পরিশ্রম করেন তারা কি রক্ত দিতে পারেন?

হ্যাঁ, সৈনিক, ক্রীড়াবিদ এবং শ্রমিকরা বিনা দ্বিধায় রক্ত দিতে পারেন। এতে তাদের স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি হয় না।

আরও পড়ুন:  এবার অস্ট্রেলিয়ায় হার দেখলেন তানজিদ-ইমনরা

১২. একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিও কি রক্ত দিতে পারেন?

হ্যাঁ, যদি তিনি ডাক্তারের পরীক্ষার ভিত্তিতে সম্পূর্ণ সুস্থ হন, তবে তিনিও রক্ত দিতে পারেন।

১৩. ট্যাটুস্ট কি রক্ত দিতে পারে?

ট্যাটু করার পর এক বছরের জন্য রক্তদান থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে।

১৪. রক্তদানের সময় দাতার কি কোন সংক্রমণ হতে পারে?

না, যদি সরকারী লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্লাড ব্যাংকে রক্তদান করা হয়, তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়।

 

রক্তদান একটি মহৎ কাজ এবং সঠিক তথ্য জানলে এর সংশয় দূর করা সম্ভব। রক্তদান করতে পারেন এমন অনেক মানুষ আছেন, যারা এই মহান কাজটি করার মাধ্যমে অন্যের জীবন বাঁচাতে পারেন। নিয়মিত রক্তদানের মাধ্যমে আমরা আমাদের সমাজকে আরও শক্তিশালী এবং মানবিক করে তুলতে পারি।

 

ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

Tags: Blood Donation  Health  Hemoglobin  Platelets  রক্তদান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *