করোনাকালে ২০২১ সালে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. ফাহাদ সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। এরপর পেরিয়ে গেছে তিন বছর। স্কুলে আর ফেরেনি সে। বর্তমানে রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরের মাতবর বাজার রোডের একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছে ফাহাদ, যেখানে তাকে মূলত লোহা কাটার কাজ করতে হয় এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই ওয়েল্ডিং মেশিন চালাতে হয়।
অথচ, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের তালিকায় ওয়ার্কশপও রয়েছে।
ফাহাদের মতো অসংখ্য শিশু-কিশোর শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে শিশু শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। গত এক যুগে শিশু শ্রম প্রতিরোধে সরকার ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা ব্যয়ে নানা প্রকল্প নিয়েছে। কিন্তু সেসব প্রকল্পের একটিও তেমন ফলপ্রসূ হয়নি, বরং শিশু শ্রমিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জাতীয় শ্রম জরিপ ২০২২ অনুযায়ী, দেশে শিশু শ্রমিক বেড়েছে সাড়ে ৮৬ হাজার, বর্তমানে ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু শ্রমিক রয়েছে, যার মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশু শ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করে, যার আওতায় এক লাখ শিশুকে ৯টি বিষয়ের ওপর ছয় মাসের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং চার মাসের দক্ষতা উন্নয়নের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কিন্তু এ প্রকল্পে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়নি, ফলে তাদের ঝুঁকিমুক্ত কাজে ফেরানো যায়নি।
আইন অনুযায়ী, কর্মক্ষেত্রে শিশুদের নিয়োগ দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও পরিসংখ্যান বলছে, এখনও তালিকায় থাকা প্রতিটি ঝুঁকিপূর্ণ খাতেই শিশুদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিশু শ্রম নিরসন নীতি ২০১০-এ শিশু শ্রমের প্রধান কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং দরিদ্র পরিবারের শিশুদের শ্রম থেকে প্রত্যাহার ও মা-বাবাকে আয়বৃদ্ধিমূলক কাজে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ১৪ বছর পরও নীতিমালাটি কার্যকর হয়নি।
শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, দেশে শিশু শ্রম প্রতিরোধে আইন, নীতিমালা ও বিভিন্ন প্রকল্প থাকলেও এগুলো বাস্তবসম্মত নয় বলে তা ফলপ্রসূ হয়নি। ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকল্প নেওয়ার আগে তা বাস্তবের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ তা যাচাই করার আহ্বান জানান তারা।