আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে যাদের জমিসহ ঘর করে দেওয়া হয়েছে, তাদের জীবন বদলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ঘর পেয়ে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে তাতে মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। মাথা উচু করে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের জন্য আবাসন নিশ্চিত করতে সরকারের আবাসন কর্মসূচি আশ্রয়ণ-২ পরিকল্পনার আওতায় মঙ্গলবার সারা দেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করার আগে দেওয়া বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘর করে দিয়েছি তাদের জীবন বদলে গেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তিনি দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে চেয়েছিলেন। সেটিই আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এজন্যই আমাদের এই প্রচেষ্টা।
বঙ্গবন্ধুর মতো আজীবন দেশের মানুষের কল্যাণে ও তাদের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের সেবক হিসেবেই বাবার মতো সেবা করে যাব। এই দেশের মানুষ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত জীবন পাবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আশ্রয়ণের মাধ্যমে মানুষের যে পরিবর্তন হয়েছে, তাতে মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় সম্প্রতি রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি পুনঃনির্মাণে তার সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঝড়ে কোথায় ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে সেই বিষয়ে আমরা খোঁজ নিয়েছি, তথ্য সংগ্রহ করেছি। তাদের ঘর করে দেব। আর ক্ষতিগ্রস্তদের উপকরণ দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছি।
তিনি বলেন ‘আপনাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই। প্রত্যেকে ঘর যাতে করতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। প্রত্যেক এলাকা থেকে তথ্য নিয়েছি।’ এ সময় আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে যারা ঘর পেয়েছেন এটি তাদের নিজেদের সম্পত্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে ঘর পাচ্ছেন এটা আপনাদের নিজের সম্পত্তি, এটার যত্ন নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ারও আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করাই নিজের লক্ষ্য জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকটা গ্রামকে আমরা নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসব। সেই নাগরিক সুবিধা আমরা নিশ্চিত করে যাচ্ছি। পাশাপাশি রাস্তাঘাট উন্নয়ন, বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, দেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করছি। যার সুফল মানুষ ভোগ করছে।
এ সময় চিকিৎসা সেবা, শিক্ষা বৃত্তি দেওয়া, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার কমানোসহ তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন গণমুখী পদক্ষেপ ও অর্জন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ কোথাও পিছিয়ে থাকবে না। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়বো কথা দিয়েছিলাম, গড়েছি। এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদাও পেয়েছি। ২০২৬ সাল থেকে পথচলা শুরু হবে। সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।
কোথাও যাতে অনাবাদি জমি না থাকে, সেজন্য দেশের মানুষের প্রতি তার অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারো কাছে ভিক্ষা করে চলতে চাই না, হাত পেতে চলতে চাই না। যতোটুকু সম্পদ তা কাজে লাগিয়ে মাথা উঁচু করে চলবো। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা দরকার। পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে আমাদের মিতব্যয়ী হতে হবে।
এ সময় আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় এক-এগারোর অগণতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিভিন্ন ভিত্তিহীন মিথ্যা-বানোয়াট, হয়রানি ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সেদিন এর প্রতিবাদ করেছিল এবং গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
এদিন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে ১৮ হাজার ৫৬৬টি গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমি ও গৃহহীন মানুষ মুক্ত ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার লালমনিরহাটে ১ হাজার ২৮২টি, কক্সবাজারে ২৬১টি এবং ভোলা জেলায় ১ হাজার ২৩৪টি বাড়ি হস্তান্তর করেন। নতুন ভূমি ও গৃহহীন মুক্ত জেলা ও উপজেলা নিয়ে সারা দেশে জেলার মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৫৮টি এবং উপজেলা হলো ৪৬৪টি।