মোশাররফ হোসেন খাদেম
সরকার যদি উন্নয়নের মাধ্যমে সন্দ্বীপের আভ্যন্তরীণ প্রত্যেকটি রাস্তাঘাট স্বর্ণ দিয়ে বাঁধিয়ে দেন, তারপরও সাধারণ মানুষ খুশি হবে না,যদি চট্টগ্রামের সাথে সন্দ্বীপের নিরাপদ নৌ-যাতায়াতের ব্যবস্থা করা না হয়। নিরাপদ নৌ-যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন, একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন। সেই পরিকল্পনার অধীন নিম্নোক্ত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরী।
ক. সন্দ্বীপের সাথে চট্টগ্রামের আরও একাধিক ঘাট সৃষ্টি করতে হবে।
খ. ঘাটের উভয় পার্শ্বে যাত্রীদের উঠানামার জন্য ব্রীজ ও খরস্রোতা নদীতে টিকে থাকতে (ভাসমান) সক্ষম এমন পল্টুন স্হাপন করতে হবে। এই জন্য বিগত একশো বছরের ডাটা ব্যবহার করতে হবে। কারণ সন্দ্বীপ চ্যানেলের উভয় পার্শ্বে সব সময় ভাঙ্গা গড়া চলমান।
গ. সন্দ্বীপের চ্যানেলের মতো খরস্রোতা নদীতে চলাচল উপযোগী স্টীমারের (বিশেষভাবে তৈরি) ব্যবস্থা করতে হবে।
ঘ. জাহাজ যেন সরাসরি জেটি বা পল্টুনে ভিড়তে পারে, সেই জন্য প্রতিনিয়ত ড্রেজিং এর ব্যবস্থা করতে হবে ।
ঙ. যেকোন একটি সংস্থাকে ঘাটের উন্নয়ন ও পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে।
উল্লেখিত কাজগুলো করার মতো, বাজেট, কারিগরি জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, কোনটা জেলা পরিষদের নেই। তাই ঘাট গুলো জেলা পরিষদের খপ্পর থেকে উদ্ধার করে, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অধীন বিআইডব্লিউটিএর নিকট হস্তান্তর করতে হবে। বিআইডব্লিউটিএ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করে,ঘাট গুলো ব্যবহার উপযোগী করে বিআইডব্লিউটিসির নিকট হস্তান্তর করবেন। বিআইডব্লিউটিসি সন্দ্বীপ চ্যানেলের মতো খরস্রোতা নদীতে চলাচল উপযোগী স্টীমার, বিশেষ অর্ডারের মাধ্যমে সংগ্রহ করে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াতের ব্যবস্থা করবেন।
বিআইডব্লিউটিএর সাথে জেলা পরিষদের ঘাট নিয়ে বিরোধের কারণে বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কুমিরা ঘাটটি পরিচালনা নিয়ে অরাজকতা বিরাজ করছে। কতেক দুর্বৃত্ত জেলা পরিষদের সহায়তায় সুকৌশলে জটিলতা সৃষ্টি করে,ইজারার পরিবর্তে ঘাটে খাস কালেকশনের নামে জনগণকে জিম্মি করে, ঘাটের অর্থ হরিলুট করে খাচ্ছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। কুমিরা ঘাটের ইজারা নিয়ে জেলাপরিষদ ও বিআইডব্লিউটিসি এর মধ্যে বিরাজমান সমস্যা স্হানীয় ভাবে মিটানো সম্ভব নয়। স্থানিয় সরকার মন্ত্রণালয় ও নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব।
সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য একটি ডিও লেটারের মাধ্যমে উভয় মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ করতে পারেন।সংসদ সদস্য ও স্হায়ী কমিটির সভাপতির অনুরোধে,উভয় মন্ত্রণালয় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় আলোচনা ক্রমে সমস্যা নিরসনে বাস্তব সিদ্ধান্ত নিবেন। আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়টি নিয়ে পক্ষদ্বয় একমত না হলে, ক্যাবিনেট সচিবের সভাপতিত্বে পুনরায় সভা করে বিষয়টি সুরাহা করা যেতে পারে। সেই সভায়ও স্থানিয় সরকার বিভাগ, ঘাটের স্বত্ব ত্যাগ করতে কোন কারণে সম্মত না হলে, বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় সরাসরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট একটি অনানুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে সমগ্র বিষয়টি তুলে ধরে সিদ্ধান্ত চাইতে পারেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা, নিশ্চয় সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাইরে কোন সিদ্ধান্ত দিবেন না।কারণ জেলা পরিষদ ও বিআইডব্লিউটিএ উভয়ই সরকারি সংস্থা। এদের কারো পক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অহেতুক অবস্থান নিবেন না। তাছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্দ্বীপের সাথে চট্টগ্রামের ঝুকিপূর্ণ যাতায়াত ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন।
এই কাজটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য যিনি সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারেন, তিনি হচ্ছেন, সন্দ্বীপ থেকে নির্বাচিত মাননীয় জাতীয় সংসদ সদস্য ও নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত স্থায়ি কমিটির সভাপতি মাহফুজুর রহমান মিতা। তাঁর যেকোন উদ্যোগ সরকার গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার কথা।
উল্লেখ্য, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাননীয় এমপি জনাব মাহফুজুর রহমান মিতা ছাড়া সন্দ্বীপে জন্মগ্রহণকারী অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে এই কাজে এককভাবে ভূমিকা রাখা সম্ভব নয়। তবে মাননীয় এমপি ,কাজটি এগিয়ে নিতে বর্তমানে কর্মরত সন্দ্বীপের যে কোন উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা /কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নিলে কাজটি বাস্তবায়নে সফলতা অর্জন করতে উনার পক্ষে সহজ হবে।
সন্দ্বীপের সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি হচ্ছে, চট্টগ্রামের সাথে সন্দ্বীপের নিরাপদ নৌ-যাতায়াত ব্যবস্থা। মাননীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নিরাপদ নৌ-যাতায়াতের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিবেন, এটা সন্দ্বীপের সকল মানুষের প্রত্যাশা।
লেখক পরিচিতি- সাবেক অতিরিক্ত সচিব।