অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান
পূর্ব সন্দ্বীপ হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক কাজী মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ হারামিয়া ইউনিয়নের রাজের গো বাড়িতে ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের পশ্চিম বাংলার নদীয়া জেলা স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষক মৌলভী গোলাম মজিদ। মাতা-আছিয়া খাতুন। পিতা-মাতার ০৫ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়।
প্রাথমিক পাঠ সম্পন্ন করেন মুছাপুর এমই স্কুল থেকে। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন নদীয়া জেলা স্কুল থেকে ১৯৩৮ সালে। কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে ১৯৪০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক এবং একই কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে বিকম পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু দেশ বিভাগের ঢামাঢোল এবং পারিবারিক টানাপোড়নে তা সম্পন্ন করতে পারেননি। শিক্ষাজীবন শেষে আবগারি শুল্ক বিভাগে সরকারি চাকুরিতে যোগদানের মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন।
শিক্ষকপুত্র, শিক্ষা, শিক্ষকতার প্রতি মোহ, এলাকাবাসীর অনুরোধ সবমিলিয়ে লোভনীয় সরকারি চাকুরীর মায়া ত্যাগ করে প্রবল আর্থিক সংকট ও ভঙ্গুর অবকাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা পূর্ব সন্দ্বীপ হাইস্কুলে ১৯৬৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। পর্যায়ক্রমে বিদ্যালয়টিকে পূর্ণাঙ্গ বহুমুখী হাইস্কুলে উন্নীত করেন। কাছাকাছি প্রতিষ্ঠান মুছাপুর হাজী আবদুল বাতেন উচ্চ বিদ্যালয়ের তীব্র বিরোধিতার কারনে হাইস্কুল হিসেবে অনুমোদন লাভে তার জামাতা বীমা ব্যক্তিত্ব মুজিবুল মাওলাকে ভূমিকা রাখতে হয়। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে তার দখল ছিল উল্লেখযোগ্য।
টানা ১৯ বছর প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৮৩ সালে তিনি অবসরে যান। এরপর নবপ্রতিষ্ঠিত পূর্ব সন্দ্বীপ এনাম নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘রেক্টর’ হিসেবে যোগ দেন ১৯৮৭ সালে। এখান থেকে বিদায় নেন ১৯৯১ সালে।
তিনি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন সক্রীয় কর্মী এবং ছাত্রজীবনে স্বাধীন পাকিস্তান আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আজীবন বাঙালি জাতীয়তাবাদ লালন করেও শিক্ষকতায় রাজনীতির প্রভাব পড়তে পারে এমন চিন্তায় কখনো রাজনীতিতে ওপেন হননি। কথিত আছে তাকে তৎকালীন সন্দ্বীপ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা সবিনয়ে গ্রহন করেননি।
১৯৪০ সালে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ০৫ ছেলে ও ০২ কন্যা সন্তানের পিতা। বড় ছেলে কাজী আক্তারুজ্জামান (সাধারণ বীমায় সহকারী ম্যানেজার ছিলেন, ১৯৯৬ সালে ইন্তেকাল করেন), ২য় ছেলে কাজী নেছার উদ্দিন (অনন্ত গ্রুপের জিএম ছিলেন, অবসরে আছেন), ৩য় ছেলে কাজী শাহেদুল করিম ফুলু (সাধারণ বীমায় ম্যানেজার ছিলেন, অবসরে আছেন), ৪র্থ সন্তান কাজী লুৎফুল করিম (বিআইডব্লিউটিএ-তে চাকুরী করছেন), ৫ম ছেলে কাজী নাজমুল করিম (সেনাবাহিনীতে ছিলেন, অবসরে আছেন), বড় মেয়ে রোকেয়া সুলতানা (২০০৭ সালে ইন্তেকাল করেন, তার স্বামী-বীমা ব্যক্তিত্ব মুজিবুল মাওলা), ছোট মেয়ে রওশন আকতার জাহান (গৃহিনী)।
১৯৯৯ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় জাতীয় হ্রদরোগ ইন্সটিটিউটে তিনি ইন্তেকাল করেন। এরপর সন্দ্বীপ নিজ বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।