জুন থেকে আগস্ট- এই ৩ মাসকে সুন্দরবনের নদী-খালের মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এ ছাড়া এই সময়টি বন্য প্রাণীর জন্যও প্রজনন মৌসুম। সে কারণে মন্ত্রিপরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সালে এই তিন মাস মাছ ধরা ও পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় ১ জুন (শনিবার) থেকে আগামী তিন মাসের জন্য বন্ধ হচ্ছে সুন্দরবনের দুয়ার। এসময় পর্যটক প্রবেশ এবং নদী ও খালে মাছ শিকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বন বিভাগ।
এ সময়ে বনজীবীদের সরকারি সহায়তার দাবির বিষয়ে বন সংরক্ষক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি এই তিন মাস প্রান্তিক জেলে-বাওয়ালিদের বিকল্প খাদ্য সহায়তা দেয়ার। বিকল্প খাদ্য ও সহায়তার জন্য জেলে-বাওয়ালিদের প্রতি পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি চাল দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। আমরা বনজীবীদের একটি তালিকাও পাঠিয়েছি।
শুক্রবার (৩১ মে) খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য সব পাস-পারমিট দেয়াও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ ৩ মাস বনে পর্যটক না গেলে বনের জীববৈচিত্র ও বন্যপ্রাণী নিরুপদ্রব থাকবে। এ ছাড়া ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্রের যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও দ্রুত কাটিয়ে ওঠা যাবে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞা সামনে রেখে শুক্রবার (৩১ মে) সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে এসেছেন জেলেরা। এদিন সকালে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তীরে গিয়ে দেখা যায়, সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসা শতাধিক মাছ ধরার নৌকা নদীর তীরে বেঁধে রাখা হয়েছে। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নৌকা মেরামতের জন্য বেড়িবাঁধের ওপর উঠিয়েও রেখেছেন।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমিটার, যা পুরো সুন্দরবনের আয়তনের ৩১ দশমিক ১৫ শতাংশ। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণী বাস করে। এছাড়া আছে প্রায় ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।