সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে তিনি লিখেছেন, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বন্ধুত্বপূর্ণ বিদায় জানানোর পর ইরানের শীর্ষ প্রতিনিধিদলকে বহনকারী একটি হেলিকপ্টারের ক্র্যাশ-ল্যান্ডিংয়ের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ইব্রাহিম রাইসি ও তার সঙ্গীদের জন্য প্রার্থনা করছি। আজারবাইজান এ ঘটনায় যেকোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসিকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়া নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সহমর্মিতা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আর্মেনীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স অ্যাকাউন্টে একটি পোস্টে শোক প্রকাশ করে জানায়, রাষ্ট্রপতি রাইসি এবং মন্ত্রী আমির আব্দোল্লাহিয়ানের জন্য আমরা প্রার্থনা করছি। উদ্ধার অভিযান চলাকালীন সময় ইরানের ঘনিষ্ঠ ও বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসেবে আর্মেনিয়া প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে যে তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং ইরানের প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাদের দলের অন্যান্য সদস্যদের জড়িত বিমানের ঘটনার রিপোর্টগুলো অনুসরণ করছে।
চলতি বছরের শুরুর দিকে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্কে উত্তেজনা বিরাজ করলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ, রাষ্ট্রপতি আসিফ আলি জারদারি এবং সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক পৃথক বার্তায় প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং তার সফরসঙ্গীদের সঙ্গে হওয়া দুর্ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা রাইসির জন্য প্রার্থনা করেছেন এবং এ কঠিন সময়ে ইরানি জাতির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এ ঘটনায় সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ঘটনার বিষয়ে সব রকমের অগ্রগতি অনুসরণ করছেন। প্রেসিডেন্ট রাইসি এবং তার কর্মীদের জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে সহায়তার জন্য ইরানে একটি দল প্রেরণের ঘোষণা দিয়েছে তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ দুঃসময়ে ইরানি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি এবং প্রেসিডেন্ট ও তার সফরসঙ্গীদের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করছি।
এ ঘটনায় আফগানিস্তানও প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। আফগানিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানায়, তারা ইরানের প্রেসিডেন্ট এবং তার সহগামী দল সম্পর্কে প্রতিবেদনগুলো অনুসরণ করছে। তারা আশা প্রকাশ করে যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিখোঁজ প্রেসিডেন্ট এবং তার সহযাত্রীদের খুঁজে পাওয়া যাবে।
ইরাকের প্রেসিডেন্ট আবদুল লতিফ রশিদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, তিনি বাগদাদে ইরানের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবরের সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথনও করেছেন এবং ইরাকি সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গে থাকা প্রতিনিধিদলের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন।
পৃথকভাবে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শিয়া’ আল সুদানী ইরাকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির পাশাপাশি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে প্রেসিডেন্ট রাইসির নিখোঁজ হেলিকপ্টার খুঁজে পেতে সহায়তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছেন।
ইরাকের রেড ক্রিসেন্ট ঘোষণা করেছে যে তারা ১০টি অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল প্রস্তুত করেছে এবং ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির সন্ধানে তাদের সহায়তায় পাঠানোর জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ইরাকের কুর্দিস্তান অঞ্চলের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এ দুর্ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নেচিরভান বারজানি এবং প্রধানমন্ত্রী মাসরুর বারজানি পৃথক বার্তা জারি করে বলেন, তারা ইরানি জনগণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন এবং কপ্টারে থাকা সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।
সৌদি আরবও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ইরানকে সাহায্য করতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছে।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টারের দুর্ঘটনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তেহরানের সঙ্গে কায়রোর সংহতির ওপর জোর দিয়েছে।
লেবাননের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি ও তার সঙ্গীদের সুস্থতা কামনা করেছে। এ বিয়োগান্তক ঘটনায় ইরানের সরকার ও জনগণের প্রতিও সমবেদনা প্রকাশ করেছে মন্ত্রণালয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে ঘোষণা করেছে যে ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার প্রতিনিধিদলকে বহনকারী একটি কপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবরটি তারা অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছে। এছাড়া অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযানে তেহরানকে যেকোনো সহায়তা দেয়ার জন্য আবুধাবির পূর্ণ প্রস্তুতি ব্যক্ত করেছে দেশটির মন্ত্রণালয়।
ওমানের সরকারি বার্তা সংস্থা এক বিবৃতিতে ইরানের প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে তেহরানকে যেকোনো সাহায্য দিতে তারা প্রস্তুত রয়েছে।
জর্ডান, কাতার, কুয়েত, ইয়েমেন, রাশিয়া এবং ভেনিজুয়েলা সবাই তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং বলেছে যে তারা ইরানি জাতির পাশে আছে। ইসলামিক রিপাবলিককে সমর্থন দিতে প্রস্তুত বলেও সহমর্মিতা ব্যক্ত করেছে দেশগুলো।
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এক বার্তায় বলেন, আমি তেহরানের ক্রাইসিস ইউনিট ও দূতাবাসের মাধ্যমে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার এবং তার সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দলের খবর অনুসরণ করছি। তাজানি আরো বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া ম্যালোনিকে ইরানের রাষ্ট্রপতি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাদের সহকারী প্রতিনিধিদলকে বহনকারী হেলিকপ্টারটির হার্ড ল্যান্ডিং ঘটনার অগ্রগতি অনুসরণ করছেন।
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ আন্দোলন, ইসলামিক জিহাদ এবং হামাস ইরানের প্রেসিডেন্টের কপ্টার বিধ্বস্তের খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে পৃথক বিবৃতি জারি করেছে। হামাস ইসলামী বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতার পাশাপাশি ইরানের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে জানায়, তারা উদ্বেগের সঙ্গে এ ঘটনার বিষয়ে অগ্রগতি অনুসরণ করছে।
ইসলামিক জিহাদও ইরানি জাতির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট ও তার সঙ্গীদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিরোধ আন্দোলনের কথা বলে।
পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব ফিলিস্তিন এক বার্তায় জানিয়েছে, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার খবরকে অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে অনুসরণ করছে আন্দোলনটি।
রোববার (১৯ মে) আজারবাইজান থেকে ফেরার পথে রাইসিকে বহনকারী কপ্টারটি দুর্ঘটনায় পড়ে। সোমবার (২০ মে) ইব্রাহিম রাইসি ও হোসেইন আমির আব্দোল্লাহিয়ানকে বহনকারী হেলিকপ্টারের সন্ধান মিলেছে। উদ্ধারকারীরা হেলিকপ্টারের কাছে পৌঁছেছে বলে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন দেশটির রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেইন কলিভান্ড। তবে প্রেসিডেন্ট রাইসির অবস্থান এখনো অস্পষ্ট বলে জানিয়েছে উদ্ধারকারীরা।
