বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করা তার লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যপূরণে এই তরুণ বেশি সময় নেননি। ষষ্ঠ বাংলাদেশি হিসেবে রোববার সকালে এভারেস্টের চূড়ায় লাল-সবুজের পতাকা ওড়ালেন বাবর। আর চট্টগ্রামের কোনো পর্বতারোহীর এটিই প্রথম এভারেস্ট জয়। ১১ বছর পর প্রতীক্ষার পর বাংলাদেশের কেউ আবার এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছালেন।
বেসক্যাম্প টিমের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ফরহান জামান। তিনি বলেন, এখন বাবর আছেন ক্যাম্প-৪-এ নামার পথে, ওই ডেথ জোনে যোগাযোগ সম্ভব নয়। তাই অভিযানের ছবি পেতে সময় লাগবে। আমরা ভীষণ আনন্দিত। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না আমাদের মূল লক্ষ্য কিন্তু শুধু এভারেস্ট নয়, লোৎসেও। তাই সবাই বাবর আলীর জন্য দোয়া করবেন।
পেশায় চিকিৎসক বাবর আলীর বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বুড়িশ্চর এলাকায়। গণমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর আশপাশের মানুষজন আসছেন তার বাড়িতে, জানাচ্ছেন অভিনন্দন।
গতকাল সকালে বাবর আলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, এভারেস্টে ছেলের ছবি নিয়ে ঘরে বসে আসেন বাবা লিয়াকত আলী ও মা লুৎফুন নাহার। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন তারা।
ছেলের এভারেস্ট জয়ের খবরে আনন্দে চোখ ছলছল তাদের। তারা বলেন, অনেক দুশ্চিন্তা ছিল। কঠিন এ যাত্রা ছিল। সকালে যখন ছেলের এভারেস্ট বিজয়ের কথা শুনলাম, এর থেকে আনন্দের সংবাদ বাবা-মার জীবনে আর কী হতে পারে।
মা লুৎফুন নাহার বলেন, ‘আমার চার ছেলেমেয়ের মধ্যে বাবর আলী দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই ছিল ডানপিটে। পাহাড়-পর্বতে ছিল ঘোরার শখ। আমরা চেয়েছিলাম সে ডাক্তার হোক। আমাদের ইচ্ছায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ডাক্তারি পাস করে। কিন্তু পর্বত বিজয়ের ইচ্ছা তার পিছু ছাড়েনি। ২০১০ সালের পর থেকেই এভারেস্ট বিজয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বকা দিই বলে আমাদের কিছু বলত না। ভাইবোনদের সঙ্গে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলত। এখনো আমার দুশ্চিন্তা রয়েছে। নেমে আসার পথটুকু অনেক কঠিন। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার ছেলে আমার বুকে ফিরে না আসবে, ততক্ষণ আমার দুশ্চিন্তা কমবে না।’
ডাক্তারি পাসের পর বাবর আলী কিছুদিন জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। আগেরবার অভিযানের সময় ছুটি না মেলায় চাকরি ছেড়ে দেন। এ যাত্রায় মাউন্ট এভারেস্টের পর লোৎসে জয়ের অভিযানে যাওয়ার কথা রয়েছে বাবরের।
১ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে নেপালের উদ্দেশে রওনা হন। ৪ এপ্রিল কাঠমান্ডু থেকে পৌঁছান লুকলাতে। সেখান থেকে পথচলা শুরু করে ১০ এপ্রিল বাবর পৌঁছে যান এভারেস্টের বেসক্যাম্পে।
বাবরের আগে ২০১০ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আরও পাঁচ বাংলাদেশি এভারেস্ট জয় করেছেন। তারা হলেন মুসা ইব্রাহিম, এম এ মুহিত, নিশাত মজুমদার, ওয়াসফিয়া নাজরিন ও খালেদ হোসাইন।