dakdiyejai.news

ছয় খাতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেবে ইউরোপের চার দেশ

ছয়টি খাতে ইউরোপের চার দেশে, বাংলাদেশি দক্ষ শ্রমিকের জন্য খুলছে দুয়ার। জার্মানি ইতালি, গ্রিস ও রোমানিয়াতে বাংলাদেশি দক্ষ কর্মী পাঠানোর রোডম্যাপের কাজ গুছিয়ে এনেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, এর বাস্তবায়ন শুরু হবে জুন থেকেই। 

২০২২ সালের এপ্রিলে ট্যালেন্ট পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম ঘোষণা করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। যেখানে বলা হয়, ২৭ দেশের এই জোট দক্ষ কর্মী নেবে মোট ৭টি দেশ থেকে। তালিকায় আছে বাংলাদেশও।

এই প্রকল্পের কেন্দ্রীয় ব্যবস্থার অধীনে তৈরি করা ডাটাবেজের উপর ভিত্তি করে সাত দেশকে চাহিদাপত্র দেবে ইইউ সদরদপ্তর। এই কর্মসূচিতে যারা কাজে যাবেন মেয়াদ শেষে ফিরতে হবে দেশে। অগ্রাধিকার পাবে তথ্যপ্রযুক্তি, কেয়ারগিভিং, নির্মাণশিল্প, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি, কৃষি ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত, জাহাজ নির্মাণ ও তৈরি পোশাকশিল্প।

বাংলাদেশ কিভাবে এই সুযোগের সর্বোচ্চটা কাজ লাগাতে পারে তা নিয়ে কাজ শুরু করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি হওয়া আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে তৈরি করা হয়েছে রোড ম্যাপও। যার জন্য মিলবে ৩ মিলিয়ন ইউরো।

আরও পড়ুন:  সন্দ্বীপ সম্পর্কে কিছু অজানা তথ্য

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ২২ জুনের মধ্যে আমরা রোডম্যাপ ফাইনাল করবো এবং ইমপ্লিমেন্টেশনে যাব। এটা এক ধরণের পাইলট প্রকল্প। সুতরাং অন্যান্য যে ইউরোপিয়ান দেশগুলো আছে তারাও কিন্তু আগ্রহী হবে। ওয়েলডিংয়ের খুব ডিমান্ড রয়েছে।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ট্যালেন্টহান্ট প্রকল্পের মাধ্যমে যেতে আগ্রহী শ্রমিকদের দেয়া হবে ভাষা ও সংস্কৃতির প্রাথমিক ধারণা।

পররাষ্ট্র সচিব আরও বলেন, এটার মডেলটি যদি দাঁড়িয়ে যায় তখন জাপানেও যেমন প্রচুর ডিমান্ড আছে একই ধরণের। বা জাপানের স্ট্যান্ডার্ড ইউরোপের স্ট্যান্ডার্ড কাছাকাছি।

তবে আলোচনায় আছে একাধিক মেগা প্রকল্পে কাজ করা ৪০ হাজার শ্রমিকের বিষয়টিও। এরই মধ্যে হাঙ্গেরি থেকে চাহিদা আছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের শ্রমিকদের। বাংলাদেশে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর গাফিলতির কারণে অনেক সময় চাকরিপ্রার্থীরা প্রতারিত হন। বিষয়টি মাথায় রেখেই এগুচ্ছে সরকার।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলছেন, সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশ থেকে দুটি প্রক্রিয়ায় কর্মী পাঠানো সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর একটি হচ্ছে বিশেষায়িত দক্ষ কর্মী (এসএসডব্লিউ-স্পেসিফায়েড স্কিলড ওয়ার্কার) মডেল, যার মাধ্যমে জাপানে লোক পাঠানো হয়। আরেকটি হচ্ছে দক্ষিণ কোরিয়ার জন্য অনুসৃত কর্মসংস্থান অনুমোদন প্রকল্প (ইপিএস-এমপ্লয়মেন্ট পারমিট স্কিম)। ইউরোপের ক্ষেত্রে এ দুটি মডেলের ধারাবাহিকতায় একটি মডেল তৈরি করা যেতে পারে। কিংবা অতীতে হংকংয়ে যেভাবে লোক পাঠানো হয়েছে, সেটিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। তবে ইউরোপে যে প্রক্রিয়াতেই কর্মী পাঠানো হোক না কেন, নিয়োগের নিয়ন্ত্রণ ইউরোপের হাতেই থাকবে।

আরও পড়ুন:  যুক্তরাষ্ট্রসহ ৭ রাষ্ট্রদূতকে দেশে ফেরার নির্দেশ

তবে দক্ষ শ্রমিকদের কোনো সনদ না থাকলে সেটি যেন তাদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে ইইউর কাছে সম্প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, বাংলাদেশে একাধিক বৃহৎ প্রকল্পে (মেগা প্রজেক্ট) অন্তত ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করেছেন এবং করছেন। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মেট্রোরেল বা এ ধরনের প্রকল্পে কাজ করার জন্য বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন হয় এবং সেটি তারা অর্জন করেছেন। কিন্তু তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো সনদ নেই। বাংলাদেশে প্রতি বছর চার বছরের নার্সিং কোর্স করে শ্রম বাজারে প্রবেশ করে ৩৫ হাজার স্নাতক। কিন্তু তাদের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি নেই। এ ধরনের দক্ষ কর্মীরা যেন বিদেশে কাজের সুযোগ পায় সেজন্য আলোচনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন:  ভুটানের রাজার আমন্ত্রণে ভুটানে যাচ্ছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী

মনে করা হচ্ছে, ট্যালেন্ট পার্টনারশিপের আওতায় এই চার দেশে দক্ষ কর্মী পাঠানো শুরু হলে তার ধারাবাহিকতায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের পাশাপাশি উন্নত বিশ্বেও কাজের পরিধি বাড়বে বাংলাদেশের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *