উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নয়, হবে জনপ্রিয়তা যাচাই

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এবার আলোচনায় উপজেলা নির্বাচন। ঘনিয়ে আসছে নির্বাচনের দিনক্ষণ। প্রথম পর্বে ১৫২ উপজেলায় ভোট গ্রহণ করা হবে ৮ মে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হওয়ার পর ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে প্রার্থীদের মধ্যে নানান প্রস্তুতি দেখা গেছে। উপজলার ভোটারদের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীরা আলাপ আলোচনা শুরু করেছেন। প্রচার প্রচারনায় থেমে নেই কেউই। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে দেখা গেছে, এমপি-মন্ত্রী ও প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয়স্বজন নৌকা প্রতীক বাগিয়ে নিয়ে জনপ্রতিনিধি হতেন তারা অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ‘জনপ্রতিনিধি’ হওয়ার সুযোগ পেতেন। এবার সেই সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়েছেন দলীয় হাই কমান্ড। 

আওয়ামী লীগ আগেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে কাউকে ‘মনোনীত’ প্রার্থী করা হবে না। যে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ পাবেন। দলের জন্য এটা হচ্ছে ব্যক্তির জনপ্রিয়তা মাপার সুযোগ। যিনি এলাকায় দলমতনির্বিশেষে জনপ্রিয় তিনিই নির্বাচিত হবেন।

আরও পড়ুন:  পুতিন-মোদির ‘খুবই ভালো’ ফোনালাপ

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের  বলেন, ‘সামনে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হবে না, দলীয় নেতাদের জনপ্রিয়তা যাচাই হবে। যারা মানুষের জন্য কাজ করেছেন জনগণ তাদের বেছে নেবে।’

জানা গেছে, যেসব উপজেলায় ভোট হবে, সেসব উপজেলার বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলি প্রার্থীদের পক্ষে দোয়া, সমর্থন চেয়ে লাগানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে। চলছে অনানুষ্ঠানিক মিটিং ও পথসভা, কর্মিসভা, উঠান বৈঠক। বিতরণ করা হচ্ছে রঙিন লিফলেট। এতে তুলে ধরা হচ্ছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত এবং এলাকার উন্নয়নে তার ভূমিকা। শুধু সরাসরি নয়, অনলাইনেও চলছে ভোটের প্রচার। প্রার্থীদের পক্ষে তাদের অনুসারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ভোট চাচ্ছেন, দোয়া সমর্থন চাচ্ছেন। গ্রামগঞ্জের চায়ের স্টলে ঝড় তুলছেন স্থানীয় ‘রাজনীতিবিদরা’। প্রার্থী ছাড়াও ভোটের মাঠ সরগরম রেখেছেন তাদের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনরা। তারাও নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরুর আগেই জমে উঠেছে মাঠে প্রচারযুদ্ধ।

আরও পড়ুন:  ট্রাম্পকে পুতিনের অভিনন্দন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আলোচনার আগ্রহ

স্থানীয় পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত উপজেলা বা স্থানীয় সরকারের যে কোনো নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে নিজস্ব বলয় তৈরি করে কিংবা দলের প্রভাবশালীদের ‘বিশেষ আশীর্বাদ’ নিয়ে অতীতে অনেক অজনপ্রিয় নেতাও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি ‘বিশেষ আশীর্বাদ’ কাজে লাগিয়ে অনেকে জয়লাভও করেন। এবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলটি প্রতীক না দেওয়ার সিদ্ধান্তে সেই সব ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ নেতা এবার নির্বাচনে কী করবেন সে ভাবনায় পড়েছেন। অন্যদিকে যেসব নেতা এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাবের কারণে কোণঠাসা ছিলেন তারা এখন রয়েছেন ফুরফুরে মেজাজে। কারণ এবার চাপিয়ে দেওয়া কোনো প্রার্থীকে গ্রহণ করবেন না স্থানীয় ভোটাররা।

উপজেলা নির্বাচনে এখনো অনেক এমপি-মন্ত্রী তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বসাতে চাইছেন। কেউ প্রকাশ্যে সমর্থন দিচ্ছেন, কেউ গোপনে। কিন্তু এতে স্থানীয় নেতাদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। এবার যারা দীর্ঘদিন দল করেছেন, মানুষের সঙ্গে ছিলেন তাদেরই বেছে নিতে চান। উড়ে এসে জুড়ে বসা কিংবা এমপিদের ভাই, শ্যালক, শ্বশুর, ভাগিনা, ভাতিজাকে চান না।

আরও পড়ুন:  নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব না দিলে ২-৭ বছরের জেল : ইসি

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, ‘প্রতীক তুলে দেওয়ার ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়বে। একাধিক প্রার্থী থাকায় যিনি জনপ্রিয় তিনিই নির্বাচিত হবেন। আমরাও মাঠ পর্যায়ে কে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তা জানার সুযোগ পাব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *