আজ ২৫ মার্চ। একাত্তরের গণহত্যার কাল রাতে। নিরস্ত্র বাঙালি হত্যার দিন! পাশবিক নির্যাতন কতটা প্রকট হলে তাকে নির্যাতন বলে- বলতে পারো হে প্রিয় স্বাধীনতা? আজ সেই ২৫ মার্চ । মনে আছে তো বাঙালি। যে রাতে সামরিক জান্তা হায়েনার মতো তান্ডব চালিয়েছিল সবুজ বাংলায়। মহাকালের ইতিহাসের সব থেকে নারকীয় ঘৃণ্য গণহত্যা যা “অপারেশন সার্চ লাইট” নামে পরিচিত।
সেই বর্বরোচিত গণহত্যা থেকে কেউ রেহাই পায়নি। ঢাকা শহর সহ পাশ্ববর্তী শহর গুলো দেখে মনে হয়ে ছিল মহাশশ্বান। সেই রাতে অত্যন্ত সুকৌশলে গ্রেফতার করা হয় বাংলার রাখাল রাজা, স্বাধীনতার যিশু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে। তাঁর নেতৃত্বে ২৬ মার্চ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এ দেশের মুক্তিকামী জনতা। বহু রক্ত ঝরেছে এ বাঙ্গালির বক্ষ থেকে।
জন যুদ্ধে জীবন দিয়েছিল শিশু-কিশোর-কৃষক-যুবার, জননী-ভগিনী সহ ৩০ লক্ষ মহতী প্রাণ।
আজ সেই ২৫ই মার্চ। স্বাধীনতার ৪ দশক পরেও সেই ভয়াল কালো রাতের দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধারা সহ অনেকে। সেই কালো রাতে বুলেটের নির্মম আঘাতে যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের আত্মার প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সরকার সংসদে সর্ব সম্মতি ক্রমে এই প্রথম গণহত্যা দিবস কে জাতীয় ভাবে পালন করার সিদ্বান্ত নিয়েছে।দেরীতে হলেও এমন সিদ্বান্ত সত্যি প্রশংসনীয়,কেননা শহীদের রক্তে ভেজা এই মাটি।
১৯৭১ এর স্বাধীনতার ঊষা লগ্নে, ইতিহাসের বাঁক পরিবর্তন কালে রনাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাধীনতার তথ্যাদি পৌছে দিতে জীবন বাজি রেখে বেলাল মোহাম্মদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন “বিল্পবী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র”। যেখান থেকে গোপনে দীর্ঘ ৯ মাস প্রচার করা হয়েছিল মুক্তির গান, স্বাধীনতার সংগ্রামের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ও মুজিব নগর সরকারের বার্তা।
মুক্তিযোদ্ধাদের প্রণোদনা দিতে এম আর আক্তার মুকুল এর চরমপত্র ছিল উল্লেখযোগ্য। সন্দ্বীপের সূর্য সন্তান এদেশের বিশিষ্ট বাঙ্গালি কবি বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাশেম সন্দ্বীপ, আবদুল্ল্যা -আল ফারুক, মুশতারী শফি সহ অসংখ্য কলা কৌশলী সে দিন এদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস পাহারা দিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রয়াস। শব্দ যে অস্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী তা কেবল ইতিহাস থেকে বুঝা যায়।
এ জাতি রক্ত দিয়েছে কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথা বিক্রি করেনি। বার বার পাকিস্থানীরা এই বাঙ্গালিদের উপর চালিয়েছে গণহত্যা, নিপীড়ন-নির্যাতন। ২ লক্ষ নারী হারিয়েছে তাঁর সম্রম। ভূলে গেলে চলবে না পাকিস্থানি প্রেতাত্মা দের দোসরেরা। যারা এখনও এ দেশে সক্রিয়। যে কোন সময় তারা অপেক্ষায় থাকে ৭১ এর পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে। ৭১ এর গোলাম আযম দের নারকীয় ভূমিকার কথা এ বাঙ্গালি ভোলেনি। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ইতিহাসের কালো পাতায় চিহ্নিত হয়ে থাকবে ইতিহাসের বেইমানরা।
আজ শোকে আপ্লুত হওয়ার দিন নয়। শোক হোক শক্তি। শহীদের রক্ত থেকে বার বার জেগে উঠবে আগামী প্রজন্ম। “মা-মাটি, মাতৃভাষা যদি স্বর্গ থেকে প্রিয় হয়ে থাকে, তবে ৫২ ও ৭১ এর বীর শহীদের আত্ম ত্যাগের চেয়ে সুমহান কোন মৃত্যু আছে বলে আমার জানা নেই”।
আজ দীপ্ত শপথ নিতে হবে এই দেশ ও দেশের স্বাধীনতার সম্মান নিয়ে কোন বিরুধী শক্তির সাথে আপস নয়। পরাজিত শক্তির বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস ও মহানায়ক দের বীরত্বব্যঞ্জক ভূমিকার কথা যুগ যুগ ধরে স্বরণ করবে এদেশের মানুষ। জাতিয় ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে সবাই কে নাড়া দেবে এই দিনের ভয়াবহতা।একদিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এটি পূর্ণ মর্যাদা পাবে।
গণহত্যা কারি দেরও নাম সরোবরে উন্মোচিত করা হোক।একই সাথে “জাতীয় শত্রু রাষ্ট পাকিস্থান” ঘোষণা করা হোক।আগামি প্রজন্মের সন্তান রা যখন জাতীয় প্রতীক গুলি চিনবে, ঠিক একই ভাবে যেন তারা খুনি বেনিয়া পাকিস্থানী নরপশু ও তাদের এদেশীয় দোসর দেরও যেন পড়ে চিনতে পারে সে লক্ষে সরকারের ভূমিকা নেয়া উচিত।
লেখক- সাংবাদিক