রাবিপ্রবির ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স  বিভাগে কেন পড়বেন, ক্যারিয়ার কোথায়?

শুরু হওয়ার মাত্র চার বছরের মধ্যে রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স  বিভাগ আলোড়ন সৃষ্টি করছে। পাহাড়ের ধার ঘেষে গড়ে ওঠা এই বিভাগ ভবিষ্যতে পাহাড় ও সমতলের বনবিভাগ ও বনায়নে সৃজনশীলতা সৃষ্টি, ফরেষ্ট্রি সম্পদকে বাঁচানো, বিলুপ্ত প্রজাতির গাছ উদ্ধার সহ নানা গবেষণায় বিভিন্ন ভূমিকা রাখবে।

সেসব ভবিষ্যৎ গবেষণা, বর্তমান চিন্তা ও উন্নতির নানান দিক নিয়ে কথা বলেছেন রাবিপ্রবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ও ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স  বিভাগের চেয়ারম্যান  ড.নিখিল চাকমা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাবিপ্রবি প্রতিনিধি আদিত্য চৌধূরী।

ডাক দিয়ে যাই: রাবিপ্রবি’র ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগ সম্পর্কে আপনার কাছ থেকে জানতে চাই।

ড.নিখিল চাকমা: বিভাগটির যাত্রা শুরু হয় ২০২০ সাল থেকে এবং এই পর্যন্ত আমরা ৪ টি ব্যাচকে পড়াচ্ছি।এই ডিপার্টমেন্টের ১ম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা বর্তমানে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত।এখানে প্রতিবছর আমরা ২৫ জন করে ভর্তি করাই। হয়ত সামনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

 

ডাক দিয়ে যাই: ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স  বিভাগ  কি অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা? আলাদার কারণ কি?

ড.নিখিল চাকমা: ফরেস্ট পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ ফরেস্টের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই ফরেস্টগুলো মানুষের জীবিকার সন্ধান দেয়। আর এই সাবজেক্টে পড়া দরকার,যেহেতু আমরা আগে থেকেই জেনে আসছি যে ফরেস্ট বাংলাদেশে আরও বৃদ্ধি করতে হবে,তাই এই প্রক্রিয়ার জন্য উপযুক্ত স্থান হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম। তাই রাবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা শেখে কীভাবে বনের পরিমাণ বৃদ্ধি করা যায়,কীভাবে বন রক্ষা করা যায়,বায়োডাইভারসিটি কীভাবে রক্ষা করা যায়।এছাড়াও আমরা জানি রাঙ্গামাটি কাপ্তাই লেক,যাকে ঘিরে অসংখ্য সংশ্লিষ্ট নদী বিদ্যমান।ফরেস্ট যদি না থাকে তাহলে নদীতে পানি থাকবেনা।এজন্য ফরেস্ট এবং ওয়াটার রিসোর্স এর রক্ষার্থে আমাদের এই সাবজেক্টটি পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য মুখ্য ও অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

আরও পড়ুন:  ৪৭তম বিসিএসে আবেদনের সময় বাড়লো প্রায় এক মাস

 

ডাক দিয়ে যাই: শিক্ষার্থীদের বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই বিভাগটিকে গুরুত্ব দেয়া কেন জরুরি?

ড.নিখিল চাকমা: এই বিভাগে সুযোগ-সুবিধা বেশি।যেমন: পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য খুবই স্পেশাল,কারণ এই এলাকায় বাংলাদেশের অন্যান্য জায়গার চেয়ে বনাঞ্চল তুলনামূলক মাত্রায় বেশি।এখানের শিক্ষার্থীরা পাহাড়ের গায়ে যে বনাঞ্চলগুলো আছে,সেগুলোর ব্যবস্থাপনা,সংরক্ষণ,এবং কোন কোন জায়গায় বন সৃষ্টি করা যায় এই সম্পর্কে তারা জ্ঞান লাভ করে।

 

ডাক দিয়ে যাই: এই বিভাগে কোন কোন মুখ্য বিষয় বা কোর্সগুলো পড়ানো হয়?

ড.নিখিল চাকমা: এখানে আমরা মূলত আমরা ফরেস্ট ইকোলজি,ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট,ফরেস্ট ইকোনোমিকস,ওয়াইল্ডলাইফ এন্ড বায়োডাইভারসিটি,ইত্যাদি বিষয়ে পড়াই।এছাড়াও ফরেস্ট থেকে যে-সব নন-টিম্বার ফরেস্ট প্রোডাক্ট উৎপাদন ও বিপণন হয়,তা সম্পর্কে ধারণা দিই।তাছাড়াও ফরেস্ট মনিটরিং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন টেকনোলোজি,জিআইএস টেকনোলোজি,ওয়াটারসেট টেকনোলোজি এবং এর বাইরেও উড টেকনোলোজি,রাবার টেকনোলজিসহ বিভিন্ন বিষয়ে পড়িয়ে থাকি।

 

ডাক দিয়ে যাই: এই বিভাগে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর এর পরবর্তীতে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা কেমন?

ড.নিখিল চাকমা: এখানের সম্ভাবনা বিস্তর।ফরেস্ট্রির জন্য বিসিএস এ আলাদা একটা ক্যাডার সার্ভিস আছে,বন ক্যাডার। তাছাড়াও সরকারি যেকোনো নিয়োগ পরীক্ষায় আমাদের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন। বন ক্যাডার ছাড়াও প্রশাসন,পররাষ্ট্র,পুলিশসহ যেকোনো ক্যাডার সার্ভিসের জন্য তারা অন্যান্যদের সাথে লড়াই করতে পারে।তাছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক বা অফিসেও তারা নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারে,কারণ আমরা সবাই জানি ও বিশ্বাস করি যে ফরেস্ট্রি হলো একটা মাল্টিডিসিপ্লিনারি সাবজেক্ট।দেশি-বিদেশি যেকোনো উন্নয়ন সংস্থা ও এনজিওতে তারা ফিট হতে পারে।

আরও পড়ুন:  রাশিয়ার দ্বিতীয় গোয়েন্দা বিমান ধ্বংসের দাবি ইউক্রেনের

 

ডাক দিয়ে যাই: এই বিভাগে ভর্তি হতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীকে কি কি যোগ্যতা অর্জন করতে হবে?

ড.নিখিল চাকমা: প্রথমত তাদের অবশ্যই বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী হতে হবে।যেমন গতবার আমরা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় সর্বমোট ৮ পয়েন্ট হলে বিজ্ঞান বিভাগ হতে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দেখেছি।তারপর তাদের সাবজেক্ট চয়েসের ভিত্তিতে তারা বিভাগ নির্বাচন করতে পারে।

 

ডাক দিয়ে যাই: বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক কেমন?

ড.নিখিল চাকমা: সম্পর্কটি খুবই মধুর। আমরা প্রতি সেমিস্টারে একটি করে ফিল্ড ট্রিপের আয়োজন করে থাকি।এখানে আমরা থিওরির সাথে প্রেক্টিকাল বিষয় নিয়েও আলোচনা করে থাকি।এবং এসবের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আমরা ছাত্র-শিক্ষকেরা গবেষণামূলক নানান কার্যক্রম পরিচালনা করি।প্রতিবছর আমাদের এই বিভাগে নানান সভা,সেমিনার,প্রতিযোগিতা,প্রেজেন্টেশন,ফিল্ড ট্রিপ,এসব বিষয়ে সকলের সাথে সকলের সম্পর্কগুলো আরও ভালোভাবে গড়ে ওঠে।

 

ডাক দিয়ে যাই: বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।

ড.নিখিল চাকমা: খুবই চমৎকার।যেহেতু আমরা খুবই নতুন একটি ডিপার্টমেন্ট হিসেবে কিছু বছর আগেই আত্মপ্রকাশ করেছি,তবুও আমাদের ডিপার্টমেন্ট অনেক কিছুতেই এগিয়ে আছে।আমাদের যারা শিক্ষকেরা আছেন,তারা প্রত্যেকেই অত্যন্ত দক্ষ ও প্রশিক্ষিত।তাঁরা দেশে-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে আমাদের এই প্রতিষ্ঠানে এসেছেন।রাবিপ্রবির একমাত্র ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগেই দুইজন ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন শিক্ষক রয়েছেন।তাছাড়াও প্রায়ই আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন আয়োজনে নানা প্রকল্প নিয়ে আমরা ভিন্ন ভিন্ন সেমিনার আয়োজন করে থাকি।আমরা সম্প্রতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই বিভাগ হতে আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার ইউনিভার্সিটিতে প্রতিনিধিত্ব করেছি কম্পাস প্রোগ্রামের আওতায়।এছাড়াও জার্মানির ইউনিভার্সিটি অফ ফ্রেইবার্গ,ও ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ হেলসিংকিতে আমরা প্রতিনিধিত্ব করেছি।আমরা আমাদের বিভাগের শিক্ষকদের মেধাকে কাজে লাগিয়ে কীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় তথা আমাদের শিক্ষার্থীদের মানুষের মতন মানুষ করে গড়ে তোলা যায়,সে ব্যাপারে সচেষ্ট আছি।আমিও চেয়ারম্যান হিসেবে চেষ্টা করছি যাতে আমাদের ছাত্র-ছাত্রীরা ঠিকমতন ক্লাস করে।আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে তা দিয়ে আমরা তাদের নানান বিষয়ে জানানোর চেষ্টা করছি।যাতে তারা ভালো শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে একটা গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে যায় এবং আমাদের এই রাবিপ্রবির বন ও পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগকে যাতে ওরা রিপ্রেজেন্ট করতে পারে।

আরও পড়ুন:  মা হতে চান সামান্থা!

 

ডাক দিয়ে যাই: আপনার গুরুত্বপূর্ণ সময়ের জন্য ধন্যবাদ।
ড.নিখিল চাকমা:
ডাক দিয়ে যাই এর  জন্যেও শুভকামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *