মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে জলদস্যুরা

ভারত মহাসাগর থেকে বাংলাদেশি জাহাজ ও এর ২৩ নাবিককে জিম্মির ৯ দিনের মাথায় মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। আজ বুধবার তারা যোগাযোগ করেছে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে মালিকপক্ষ। জিম্মি জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, জলদস্যুরা যোগাযোগ শুরু করেছে। আলোচনার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

জলদস্যুদের পক্ষ থেকে মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ শুরুকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন নাবিকদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্যাপ্টেন আনাম চৌধুরী। মালিকপক্ষ-বিমাকারী প্রতিষ্ঠান ও জলদস্যুদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে দুপক্ষ একটি সমঝোতায় পৌঁছাবে বলে আশা করেন তিনি।

এদিকে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ও নাবিকদের ‘জোরপূর্বক’ উদ্ধারে প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। এছাড়াও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। তবে তাদের এমন পদক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করেছে এমভি আব্দুল্লাহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। তারা এ সংকটের সমাধান চান সমঝোতার মাধ্যমে।

আরও পড়ুন:  অর্জিত জ্ঞান মানুষের কল্যাণে লাগানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির

নাবিকদের জীবনের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে অভিযানের প্রস্তাবে সরকার ও মালিকপক্ষ রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব খুরশেদ আলম। একটি বেসরকারি টেলিভিশন টকশোতে তিনি বলেন, এখানে হতাহতের আশঙ্কা থাকার কারণে আমরা এবং বিশেষ করে মালিকপক্ষ বলছে যে, ‘না, শান্তিপূর্ণভাবে অতীতে যেভাবে এটা সমাধান হয়েছে, সেভাবে আমরা সমাধান করব। আমরা সেই পথেই আমরা এগোচ্ছি।’

অন্যদিকে অভিযানের প্রস্তুতির খবরে ক্ষুব্ধ হয়ে তা বন্ধ করতে নাবিকদের ওপর চাপ দিচ্ছে দস্যুরা। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশের সিনিয়র নাবিক ক্যাপ্টেন আতিক ইউ এ খান জানান, গত দুইদিন আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী এমভি আবদুল্লাহকে বেশ চাপের মুখে রেখেছে। যুদ্ধজাহাজগুলো এমভি আবদুল্লাহ’র দেড় মাইলের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে। ফলে জলদস্যুরা জাহাজের নোঙর তুলে আরও ভেতরে চলে গিয়ে তীরের মাত্র দেড় মাইল দূরে নোঙর করেছে।

আরও পড়ুন:  ‘এমভি আবদুল্লাহ’ উদ্ধারে নামছে সোমালি পুলিশ ও বিদেশি নৌ সেনারা

জলদস্যুরা এটাও বলেছে যে, বাড়াবাড়ি করলে জাহাজ তীরে তুলে দেবে। তবে দুই নৌবাহিনী এখনো বিভিন্নভাবে তাদের অবস্থান জানান দিচ্ছে।

তিনি আরও জানান, নৌবাহিনীর চাপে নাবিকদের এখন ২৪ ঘণ্টাই জাহাজের ব্রিজে অবস্থান করতে হচ্ছে। এছাড়া মাঝেমধ্যে ভিএইচএফ (ওয়াকি টকি) ব্যবহার করে নৌবাহিনীকে অনুরোধও জানাতে হচ্ছে যেন কাছে না আসে।

এরই মধ্যে গত শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী আরেকটি পণ্যবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে। মাল্টিজ-পতাকাবাহী এমভি রুয়েন গত ডিসেম্বরে হাইজ্যাক হয়েছিল। ভারতীয় সেনারা এর ১৭ ক্রুকে মুক্ত করে এবং ৩৫ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে। পান্টল্যান্ড সোমালিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল, যেখানে অনেকগুলো জলদস্যু দলের ঘাঁটি রয়েছে।

ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী বলেছে, এমভি আব্দুল্লাহকে দখল করে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে।

আরও পড়ুন:  এমভি আবদুল্লাহ: ‘অভিযানের প্রস্তুতি’ নিচ্ছে আন্তর্জাতিক বাহিনী

এর আগে মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরের সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। জলদস্যুরা জাহাজটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ২৩ নাবিকের সবাইকে জিম্মি করে। জাহাজটি জলদস্যুদের হাতে যাওয়ার পর সেটির নজরদারিতে ইউরোপীয় নৌবাহিনীর অপারেশন আটালান্টা এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর তৎপরতার খবর এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *