রোজা সম্পর্কিত আধুনিক সমস্যার সমাধান

যুগে যুগে ইসলামের অন্য সব বিধানের মতো রোজা বিষয়েও নতুন জিজ্ঞাসা তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান আবিষ্কারের কারণে সৃষ্ট এসব নতুন সমস্যার সমাধানও দিয়েছেন বিজ্ঞ আলিম ও ফকিহগণ। এখানে রোজাবিষয়ক কিছু আধুনিক মাসায়েল আলোচনা করা হলো-

রমজানে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণের কারণে কোনো ব্যক্তির রোজা যদি ২৭ বা ২৮টি হয়ে যায়, অর্থাৎ ২৭-২৮টি রোজা রাখার পর সেই দেশে ঈদের চাঁদ উদিত হয়ে যায়, তাহলে তার কর্তব্য হলো ওই দেশের রোজাদারদের মতো রোজা ছেড়ে দেওয়া এবং সবার সঙ্গে ঈদ করা। অবশ্য, পরে সেই রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে। একইভাবে রোজা বেশি হয়ে গেলেও একই বিধান। রোজাদারদের সম্মানে সেও রোজা রেখে দেবে এবং ওই দেশের লোকদের সঙ্গে ঈদ করবে। (ফতোয়ায়ে রাহিমিয়া)। বিমানযাত্রার কারণে দিন বড় বা ছোট হয়ে গেলেও একই বিধান। অর্থাৎ, অবস্থানস্থলে ইফতারের সময় হলে ইফতার করতে হবে।

ইনহেলার ব্যবহার
রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যায়। তাই সাহরির শেষ সময় ও ইফতারের প্রথমে ইনহেলার ব্যবহার করলে যদি তেমন অসুবিধা না হয়, তবে রোজা অবস্থায় ইনহেলার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা জরুরি; কিন্তু অসুস্থতা বেশি হওয়ার কারণে যদি দিনের বেলায় ব্যবহার করা জরুরি হয়, তাহলে তখন ব্যবহার করতে পারবে। সে ক্ষেত্রে তিনটি করণীয় রয়েছে। এক. এই অজুহাতে দিনের বেলায় ইনহেলার ব্যবহার করলেও অন্যান্য পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। দুই. পরে রোগ ভালো হলে রোজাটির কাজা করে নিতে হবে। তিন. অপারগতা যদি আজীবন থাকে, তাহলে ফিদয়া আদায় করতে হবে। (রদ্দুল মুখতার)

আরও পড়ুন:  সুপার ওভারে পাকিস্তানকে হারিয়ে জয় যুক্তরাষ্ট্রের

ইনজেকশন পুশ করা
ইনজেকশন, ইনস্যুলিন ও স্যালাইন নিলে রোজা ভাঙবে না। তবে গ্লুকোজ-জাতীয় ইনজেকশন, অর্থাৎ যেসব স্যালাইন ও ইনজেকশন খাদ্যের কাজ দেয়, রোজা অবস্থায় মারাত্মক অসুস্থতা ছাড়া নেওয়া যাবে না। (আলাতে জাদিদা কি শরয়ি আহকাম)

রক্ত দেওয়া-নেওয়া
রোজা অবস্থায় রক্ত দেওয়া-নেওয়া দুটিই জায়েজ। এর কারণে রোজা ভাঙবে না। তাই ডায়ালাইসিসের কারণে রোজা ভাঙবে না। তবে রক্ত দেওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা অবস্থায় রক্তদান মাকরুহ। (ফিকহুল নাওয়াজিল)

এনজিওগ্রাম ও অ্যান্ডোসকপি
হার্ট ব্লক হয়ে গেলে ঊরুর গোড়া দিয়ে কেটে বিশেষ রগের ভেতর দিয়ে হার্ট পর্যন্ত যে যন্ত্র ঢুকিয়ে পরীক্ষা করা হয়, তার নাম এনজিওগ্রাম। এই যন্ত্রে যদি কোনো ধরনের ওষুধ লাগানো থাকে, তার পরেও রোজা ভাঙবে না। আর চিকন পাইপ, যার মাথায় বাল্ব-জাতীয় একটি বস্তু থাকে। পাইপটি পাকস্থলীতে ঢোকানো হয় এবং বাইরে থাকা মনিটরের মাধ্যমে রোগীর পেটের অবস্থা নির্ণয় করা হয়। এই নলে যদি কোনো ওষুধ ব্যবহার করা হয় বা পাইপের ভেতর দিয়ে পানি বা ওষুধ ছিটানো হয়ে থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)

আরও পড়ুন:  ওমরাহ পালন করলেন প্রধানমন্ত্রী

দাঁত তোলা
রোজা অবস্থায় একান্ত প্রয়োজন হলে দাঁত তোলা জায়েজ আছে। তবে একান্ত প্রয়োজন না হলে এমনটা করা মাকরুহ। ওষুধ যদি গলায় চলে যায় অথবা থুতু থেকে বেশি অথবা সমপরিমাণ রক্ত যদি গলায় যায় তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (আহসানুল ফাতওয়া)

পেস্ট ও টুথ পাউডার ব্যবহার
রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় টুথ পাউডার, পেস্ট, মাজন ইত্যাদি ব্যবহার করা মাকরুহ। তবে গলায় পৌঁছালে রোজা ভেঙে যাবে। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)

অক্সিজেন
রোজা অবস্থায় ওষুধ ব্যবহৃত অক্সিজেন ব্যবহার করলে রোজা ভেঙে যাবে। তবে শুধু বাতাসের অক্সিজেন নিলে রোজা ভাঙবে না। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)

মাথায় অপারেশন
রোজা অবস্থায় মাথায় অপারেশন করে ওষুধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক, রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া)

লেপারোসকপি
শিকজাতীয় যন্ত্র দ্বারা পেট ছিদ্র করে পেটের ভেতরের কোনো অংশ বা মাংস ইত্যাদি পরীক্ষা করার উদ্দেশ্যে বের করে নিয়ে আসার জন্য ব্যবহৃত যন্ত্র। এতে যদি ওষুধ লাগানো থাকে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, অন্যথায় রোজা ভাঙবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহিয়া)

প্রক্টোসকপি
পাইলস, অর্শ ইত্যাদি রোগের পরীক্ষাকে প্রক্টোসকপি বলে। মলদ্বার দিয়ে নল প্রবেশ করিয়ে পরীক্ষাটি করা হয়। রোগী যাতে ব্যথা না পায়, সে জন্য নলের মধ্যে গ্লিসারিন জাতীয় কোনো পিচ্ছিল বস্তু ব্যবহার করা হয়। নলটি পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করে না। চিকিৎসকদের মতানুসারে, ওই পিচ্ছিল বস্তুটি নলের সঙ্গে মিশে থাকে এবং নলের সঙ্গেই বেরিয়ে আসে, ভেতরে থাকে না। থাকলেও তা পরে বেরিয়ে আসে। তবে ওই বস্তু ভেজা হওয়ার কারণে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতওয়া শামি)

আরও পড়ুন:  এ নৌকা নূহ নবীর নৌকা: শেখ হাসিনা

চোখে ওষুধ ব্যবহার
চোখে ড্রপ, ওষুধ, সুরমা বা মলম ইত্যাদি ব্যবহার করলে রোজা নষ্ট হবে না। যদিও এগুলোর স্বাদ গলায় উপলব্ধি হয়। কারণ চোখে ওষুধ ইত্যাদি দিলে রোজা না ভাঙার বিষয়টি হাদিস ও ফিকাহশাস্ত্রের মূলনীতি দ্বারা প্রমাণিত। (জাদিদ ফিকহি মাসায়েল)

নাইট্রোগ্লিসারিন
অ্যারোসল-জাতীয় ওষুধটি হার্টের রোগীরা ব্যবহার করেন। ডাক্তারের মতে, ওষুধটি জিহ্বার নিচে দুই-তিন ফোঁটা দেওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে শিরার মাধ্যমে রক্তের সঙ্গে মিশে যায়। এ হিসাবে এই ওষুধ ব্যবহার করার পর গলায় ওষুধ না গেলে বা এর স্বাদ না পৌঁছালে রোজা ভাঙবে না (ফিকহুল নাওয়াজিল)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *