নতুন চাকরিজীবীরা পেনশন পাবেন না

চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর থেকে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার চাকরিতে যাঁরা নতুন যোগ দেবেন, তাঁরা বিদ্যমান ব্যবস্থার মতো আর অবসরোত্তর পেনশন সুবিধা পাবেন না। তার বদলে নতুনদের বাধ্যতামূলক সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ বুধবার এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দেশের সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর চাকরিতে যেসব কর্মকর্তা বা কর্মচারী চলতি বছরের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেবেন, সরকার তাঁদের সর্বজনীন পেনশনের আওতাভুক্ত করল।

সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে সাধারণ ভবিষ্য তহবিল (জিপিএফ) এবং স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলো প্রদেয় ভবিষ্য তহবিলে (সিপিএফ) টাকা জমা রাখেন, যার বিনিময়ে সরকার ১১ থেকে ১৩ শতাংশ হারে সুদ দেয়। এ টাকা পেনশনে যাওয়ার পর অবসরভোগীরা পেয়ে থাকেন। যেসব সরকারি কর্মচারী রাজস্ব খাত থেকে বেতন পান, তাঁরা টাকা রাখেন জিপিএফে। আর যাঁরা রাজস্ব খাতের বাইরে থেকে বেতন পান, তাঁরা টাকা রাখেন সিপিএফে।

আরও পড়ুন:  গ্রিসে বৈধভাবে বসবাসে অনুমতি পেলেন ৩ হাজার ৪০৫ জন বাংলাদেশি

স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মিলে প্রায় ৪০০ সংস্থা রয়েছে, যেগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৪ লাখের বেশি। এ ধরনের সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বীমা করপোরেশনসহ সব করপোরেশন, পেট্রোবাংলা, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি), বিএসটিআই ইত্যাদি।

চারটি আলাদা কর্মসূচি (স্কিম) নিয়ে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার যাত্রা শুরু হয় গত বছরের ১৭ আগস্ট, উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হচ্ছে প্রগতি, সুরক্ষা, প্রবাস ও সমতা। প্রগতি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কর্মচারীদের জন্য। সমতা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী (যাঁদের আয়সীমা বার্ষিক অনূর্ধ্ব ৬০ হাজার টাকা) স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য।  প্রবাস শুধু প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য। আর সুরক্ষা রিকশাচালক, কৃষক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি স্বকর্মে নিয়োজিত নাগরিকদের জন্য।

আরও পড়ুন:  ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন

সর্বজনীন পেনশনে ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী একজন সুবিধাভোগী ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সের সুবিধাভোগী ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়া সাপেক্ষে আজীবন পেনশন সুবিধা ভোগ করবেন।

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছে সরকার, তারই অংশ হিসেবে এ দফায় নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংস্থাগুলোতে আগামী ১ জুলাইয়ের পর যাঁরা নতুন চাকরিতে যোগ দেবেন, তাঁদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামের একটি কর্মসূচি চালুর চিন্তা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

জানা গেছে, বর্তমানে স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা যে পেনশন সুবিধার আওতাভুক্ত রয়েছেন, তাঁদেরও প্রত্যয় নামের নতুন পেনশন কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার সুযোগ রাখা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তাঁদের বিদ্যমান পেনশনের সুবিধা সমর্পণ করতে হবে।

আরও পড়ুন:  রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমছে না, জনপ্রতি বরাদ্দ ১২ ডলার

জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত ইত্যাদি সংস্থায় আগামী ১ জুলাইয়ের পর নতুন নিয়োগপ্রাপ্তদের জন্য ‘প্রত্যয়’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করা হবে। এ জন্য বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে, যা আগামী সপ্তাহে জারি হওয়ার কথা।

সংস্থাগুলোতে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা কমবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এটা আপেক্ষিক। তবে অনেক দিন চর্চা ও বিশ্লেষণের পরই আমরা এমন সিদ্ধান্তে এসেছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *