রমজানে আত্মশুদ্ধি করবেন যেভাবে

বছর ঘুরে এসেছে মাহে রমজান। আত্ম-অনুসন্ধান ও আত্মউপলব্ধির মাস এটি। আত্মসমালোচনার মধ্য দিয়ে আত্মশুদ্ধি অর্জনের সুযোগ রয়েছে এই মাসে। আমাদের কিছু করণীয় ও বর্জনীয় অনুসরণের মধ্য দিয়ে আমরা রমজান মাসকে নিজেদের জন্যে সার্থক করে তুলতে পারি। আর একটি সার্থক রমজান আমাদের দিতে পারে আত্মশুদ্ধির পরম স্বাদ, জীবনকে নিয়ে যেতে পারে সর্বোচ্চ মহিমায়।

বেশি বেশি ইবাদত করুন
রমজান মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নিয়তে আত্মিক সামর্থ্য অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিন। সঠিক নিয়মে রোজা রাখার সাথে সাথে অনুষঙ্গিক ইবাদতকে প্রাধান্য দিন।

রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের। তাই নফল ইবাদতের চর্চা বাড়ান।

তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় উত্তম ইবাদত। তাই সেহরির জন্যে একটু আগে আগে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন।

হোন সহমর্মী-সমমর্মী
রমজান সমমর্মিতা অনুশীলনের মাস। বিশ্বজনীন মমতা জাগ্রত করার মাস। নবীজী (সা.) সৃষ্টির সেবায় কাজ করাকে রমজানে এতেকাফের চেয়েও বেশি সওয়াবের বলে উল্লেখ করেছেন। তাই এই মাসে সৃষ্টির সেবায় যথাসম্ভব সময় ব্যয় করুন। দুস্থ অসহায়দের দারিদ্র ও দুর্দশা লাঘবে সচেষ্ট থাকুন।

আরও পড়ুন:  পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আগামীকাল

নবীজী (সা.) রোজার মাসে দানের পরিমাণ অনেক বাড়িয়ে দিতেন। কারণ এ-মাসে দানের সওয়াব অন্য সময়ের চেয়ে ৭০ গুণ।

তাই আপনিও বেশি বেশি দান করুন। সেহরি শুরু করুন মাটির ব্যাংকে দান করে। সঙ্ঘবদ্ধ দানের বদৌলতে আপনি পাবেন ৪,৯০০ (৭০ X ৭০) গুণ সওয়াব!

সহনশীল হোন
ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুশীলনের মাসও রমজান। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত।

তাই রমজানে পরনিন্দা, পরচর্চা ও গীবত পুরোপুরি বর্জন করুন। অপ্রয়োজনীয় কথা, বিতর্ক, ঝগড়া, উত্তেজনা ও দুর্ব্যবহার করা থেকে সচেতনভাবে বিরত থাকুন। অন্যেরা করলেও আপনি অংশ নেবেন না। আপনার সাথে কেউ যেচে এসে বিবাদ করতে চাইলেও আপনি প্রশান্ত থাকুন।

নৈতিকতার অনুশীলন করুন
আপনি যদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন তাহলে এ মাসে খাদ্যে ভেজাল, মজুদদারি, ওজনে কম দেয়া, নকল পণ্য বিক্রি করা থেকে বিরত থাকুন। বেশি লাভের জন্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি করবেন না; নিম্ম আয়ের মানুষও যেন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারে সে পরিবেশ বজায় রাখুন।

আর যদি চাকুরিজীবী হন তাহলে ঘুষ বা অবৈধ লেনদেন, দীর্ঘসূত্রিতা, অসততা, দুর্নীতি, অধস্তনদের সাথে দুর্ব্যবহার ইত্যাদি থেকে বিরত থাকুন।

আরও পড়ুন:  মাহে রমজানে দানের হাত বাড়িয়ে দিন

মুক্ত হোন আসক্তি থেকে
সব ধরণের আসক্তি থেকে মুক্ত হবার সবচেয়ে ভাল সময় রমজান। ধূমপান বা অন্য কোনো মাদকে আসক্তি থাকলে তা পুরোপুরি বর্জন করুন এ-মাসে।

ভার্চুয়াল-আসক্তি থেকে মুক্ত হতে স্মার্টফোনের অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার বন্ধ করুন; পুরোপুরি বর্জন করুন ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার, টিভি সিরিয়াল, ওয়েব সিরিজ, অনলাইন গেমসহ সবধরণের বিনোদন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি স্মার্টফোন থেকে এই অ্যাপসগুলো ডিলিট করে দেন।

শপিং-আসক্তি থেকে মুক্ত হোন, রমজানকে কেনাকাটাসর্বস্ব বানাবেন না। ঈদের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা রোজার আগেই সেরে ফেলুন; আপনি একদিকে ইবাদতের জন্যে বাড়তি সময় পাবেন, আবার বেঁচে যাবেন অর্থ, সময় ও শ্রমের অপচয় থেকেও।

সময় বের করুন আত্ম-অনুসন্ধানের জন্যে
আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পড়ুন বেশি বেশি। খতমে কোরআনে অংশ নিয়ে ডুবে যান কোরআনের বাণীর গভীরে।
পাশাপাশি নিয়মিত অধ্যায়ন করুন হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী। উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন নবীজীর (সা.) শিক্ষাকে।

আত্মনিমগ্ন হোন সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে। নিয়মিত দু’বেলা মেডিটেশন করুন। প্রার্থনা ও জিকিরে নিমগ্ন থাকুন যথাসম্ভব।

আরও পড়ুন:  ইফতারের ভাজাপোড়ায় হৃদরোগ-স্ট্রোকের ঝুঁকি

নাজাতের অনুসন্ধান করুন
হাদীসে আছে- রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। আর তা হলো শবে কদর।

নবীজী (সা.) রমজানের শেষ ১০ বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করতে বলেছেন। তিনি বলেন, ‘পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও আত্মশুদ্ধির নিয়তে কদরের রাতে নফল ইবাদতে মগ্ন হও, তোমাদের অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ (আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম)

তাই এই রাতগুলোকে কদর-এর মহিমান্বিত রাত মনে করে ফজর না হওয়া পর্যন্ত ইবাদতে মগ্ন থাকুন। নবীজী (সা.) সুন্নত অনুসরণে রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতে সচেষ্ট থাকুন।

রমজানে যে সু-অভ্যাসগুলো গড়ে তুলেছেন তা ধরে রাখুন পরবর্তী ১১ মাসে। তাহলেই আপনি অর্জন করবেন আত্মশুদ্ধি; স্রষ্টার অফুরন্ত রহমত ও বরকত পেতে থাকবেন বছরজুড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *