তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ

রাজস্ব আয় বৃদ্ধি ও জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাকপণ্যের দাম ও কর কার্যকরভাবে বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এই দাবি জানানো হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম। সভায় আত্মা’র পক্ষ থেকে জানানো হয়, তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ৯,৪০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে। এই বর্ধিত রাজস্ব চলমান আর্থিক সংকট মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে প্রায় পাঁচ লাখ তরুণসহ মোট এগার লাখের অধিক মানুষের অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরও সস্তা হয়ে পড়ছে। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরুপ। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ জুলাই) খোলা চিনির দাম বেড়েছে ৮৯ শতাংশ, আলু ৮৭ শতাংশ, খোলা আটা ৭৫ শতাংশ, পাঙ্গাস মাছ ৪৭ শতাংশ, ডিম ৪৩ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, গুঁড়ো দুধ ৩০ শতাংশ, এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একইসময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন:  চলতি বছর ডেঙ্গুতে ঢাকায় ১০০ জনের মৃত্যু

প্রাক-বাজেট সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আগামী অর্থবছরে বাজেটে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি অ্যাডভেলোরেম এর পরিবর্তে সুনির্দিষ্ট কর পদ্ধতি চালুর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

প্রাক-বাজেট সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আত্মা’র প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নেয় জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলোক, আত্মা’র কনভেনর মর্তুজা হায়দার লিটন, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ, মিজান চৌধুরী, চ্যানেল আইয়ের সিনিয়র নিউজ এডিটর মীর মাশরুর জামান রনি, দি ফাইনানশিয়াল এক্সপ্রেসের স্পেশাল করেসপনডেন্ট দৌলত আক্তার মালা।

আত্মা’র পক্ষ থেকে প্রাক-বাজেট সভায় আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে নিম্ন স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ শলাকা মধ্যম স্তরের সিগারেটের খুচরা মূল্য ৭৫ টাকা, উচ্চ স্তরের খুচরা মূল্য ১২৫ টাকা এবং প্রিমিয়াম স্তরের প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৬৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। এই তিনটি স্তরে সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

আরও পড়ুন:  ভূমিকম্পে কাঁপলো দেশ

প্রাক-বাজেট সভায় ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি ৭৮ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক (ধূমপান ও ধোঁয়াবিহীন) ব্যবহার করেন, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লক্ষ ৬১ হাজারের অধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *