দেশের পাশাপাশি ওপার বাংলাতেও দারুণ শ্রোতাপ্রিয় রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। গুণী এই শিল্পী এবার ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পাচ্ছেন। প্রতিবছরের মতো এবারও প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে গত ২৫ জানুয়ারি ২০২৪ সালের পদ্ম সম্মাননা প্রাপকদের নাম ঘোষণা করেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বছর ১১০ জনকে পদ্মশ্রী সম্মাননা দেওয়া হবে। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে এ সম্মাননা তুলে দেওয়া হবে। ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’র পর অন্যতম সম্মান হলো পদ্ম পুরস্কার। এই পুরস্কার তিনটি বিভাগে দেওয়া হয়—পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং পদ্মশ্রী। ভারত সরকার ১৯৫৪ সালে পদ্ম পুরস্কার প্রদান শুরু করে। ১৯৫৫ সালে পুরস্কারটির তিনটি ভাগ হয়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এবারের তালিকায় পদ্মবিভূষণে ৫ জন, পদ্মভূষণে ১৭ জন এবং পদ্মশ্রীতে ১১০ জনকে ভূষিত করা হয়েছে।
এবারের পদ্মশ্রী প্রাপ্তদের রয়েছেন ভারতের প্রথম নারী মাহুত পার্বতী বড়ুয়া, ছত্তিশগড়ের জশপুরের আদিবাসী উন্নয়নকর্মী জগেশ্বর যাদব, আদিবাসী পরিবেশবিদ এবং নারী উন্নয়নকর্মী চামি মুর্মু, দিব্যাঙ্গ সমাজকর্মী গুরবিন্দ্র সিংহ, কৃষক সত্যনারায়ণ বেলেরি, সমাজকর্মী সংথানকিমা, প্রাচীন ওষধি চিকিত্সক হেমচাঁদ মাঞ্জি। তালিকায় আরও আছেন কলকাতার কুমোরটুলির মৃিশল্পী সনাতন রুদ্র পাল, ছৌ নাচের মুখোশ তৈরিকারক নেপালচন্দ্র সূত্রধর, আদিবাসী পরিবেশকর্মী দুখু,, দক্ষিণ আন্দামানের জৈব কৃষক কে চেল্লাম্মাল, অরুণাচল প্রদেশের ভেষজ ওষুধ বিশেষজ্ঞ ইয়ানুং জামো লেগো, মাইসুরুর আদিবাসী উন্নয়নকর্মী সোমান্না, আসামের আদিবাসী কৃষক সর্বেশ্বর বসুমাতারি, বিশিষ্ট শল্য চিকিত্সক প্রেমা ধনরাজ, ক্রীড়াবিদ উদয় বিশ্বনাথ দেশপান্ডে, মাইক্রোবায়োলজিস্ট ইয়াজদি মানেক্সা ইটালিয়া, শিল্পী দম্পতি শান্তিদেবী পাসওয়ান, শিবান পাসওয়ান, পট শিল্পী অশোক কুমার বিশ্বাস, নৃত্যশিল্পী বালকৃষ্ণান সদানম পুথিয়া ভিটিল, ত্রিপুরার শাল তাঁতি স্মৃতিরেখা চাকমা, ওমপ্রকাশ শর্মা, কন্নড়ের লোকশিল্পী নারায়ণ ইপি, ওড়িশার লোকশিল্পী ভগবত প্রধান, বাঁশ শিল্পী জর্ডন লেপচা, মণিপুরের মচিহান সাসা, তেলঙ্গানার গড্ডাম সাম্মাইয়া ও রাজস্থানের বহুরূপী শিল্পী জানকীলাল।
উল্লেখ্য, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা রবীন্দ্রসংগীত ছাড়াও ধ্রুপদী, টপ্পা ও কীর্তন গানের ওপর শিক্ষা লাভ করেছেন। তিনি ‘ছায়ানট’ ও পরে ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এ সংগীতশিল্পী বাংলাদেশের পাশাপাশি ওপার বাংলাতেও ভীষণ জনপ্রিয়। বন্যা রবীন্দ্রসংগীতের কিংবদন্তি শিল্পী শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীলিমা সেন এবং আশীষ বন্দ্যোপাধায়ের মতো সংগীতজ্ঞদের কাছ থেকে উত্সাহ লাভ করেছেন। তাদের একান্ত সান্নিধ্যও পেয়েছেন তিনি। এ শিল্পী ‘সুরের ধারা’ নামের একটি সংগীত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। গুণী এই শিল্পী সংগীতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি ফিরোজা বেগম স্মৃতি স্বর্ণপদক, আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড, আনন্দ সংগীত পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। অর্জনের ঝুলিতে জমা করেছেন ভারতের ‘বঙ্গভূষণ’ পুরস্কারও।