মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:
হাওর অঞ্চলগুলো বাংলাদেশের একটি অনন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ। বর্ষা মৌসুমে পানিতে প্লাবিত হয়ে এরা বিশাল জলাধারে পরিণত হয় এবং শীত ও গ্রীষ্মকালে প্রান্তরে রূপান্তরিত হয়। হাওরগুলোর এই পরিবর্তনশীল পরিবেশ প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাওরগুলির মধ্যে কান্দা নামে পরিচিত উঁচু জমিগুলি বছরের কিছু সময় জেগে ওঠে এবং মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জন্য আশ্রয়স্থল হয়। এছাড়া, শুকনো মৌসুমে কান্দাগুলো সবুজ চারণভূমিতে পরিণত হয়, যা গবাদি পশুর খাদ্যের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ হাওর এবং একটি রামসার সাইট, যা আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি হিসেবে স্বীকৃত। এ হাওরটি বিভিন্ন ধরনের পাখি ও জলজ প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত এবং স্থানীয় জনগণের জীবিকা নির্বাহেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আপনি যদি এই হাওরগুলির সংরক্ষণ এবং টাঙ্গুয়ার হাওরের সুরক্ষা সম্পর্কে আরও জানতে চান বা কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রয়োজন হয়, তাহলে আমাকে জানাতে পারেন।
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময় এবং জীববৈচিত্র্যের একটি সমৃদ্ধ আবাসস্থল। এটি সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলার মাঝে অবস্থিত এবং প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। টাঙ্গুয়ার হাওর মূলত ৫১টি ছোট হাওরের সমন্বয়ে তৈরি এবং এর মূল হাওর ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত। বাকি অংশে গ্রাম ও কৃষিজমি রয়েছে, যা বর্ষার সময় প্লাবিত হয়ে বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়।
এই হাওরের পাশে মেঘালয়ের পাহাড় থেকে নেমে আসা তিরিশটিরও বেশি ঝরনা রয়েছে, যা হাওরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তোলে। টাঙ্গুয়ার হাওর জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ। এখানে প্রায় ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির বেশি সরীসৃপ এবং ২০৮ প্রজাতির পাখি বাস করে। শীতকালে প্রায় ২৫০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি সুদূর সাইবেরিয়া থেকে এখানে উড়ে আসে।
টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিষ্টি জলের জলাভূমি এবং এটি স্থানীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এই হাওরের সংরক্ষণ এবং এর জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, স্থানীয় জনগণের জীবনধারা ও অর্থনীতির সাথেও গভীরভাবে জড়িত।
টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য। এর বিশাল জলাভূমি এবং জীববৈচিত্র্যের কারণে এটি একটি মনোরম স্থান। এখানে নানা ধরনের উদ্ভিদ এবং জলজ গাছপালা পাওয়া যায়, যেমন শাপলা, গুইজ্জাকাঁটা, উকল, হেলেঞ্চা, বনতুলসী, নলখাগড়া, বল্লুয়া, চাল্লিয়া, সিংড়া, শালুক, হিজল, করচ, বরুণ, এবং পানিফল।
টাঙ্গুয়ার হাওরে ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় বর্ষাকাল, যখন হাওর পুরোপুরি পানিতে ভরপুর থাকে। তবে পাখি দেখতে হলে শীতকালে আসাই উত্তম, কারণ এই সময়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অনেক পরিযায়ী পাখি এখানে আসে।
টাঙ্গুয়ার হাওরে পৌঁছানোর জন্য, প্রথমে ঢাকা বা সিলেট থেকে সুনামগঞ্জ যেতে হবে। সুনামগঞ্জ থেকে অটো রিকশা করে তাহিরপুর ঘাটে পৌঁছাতে হবে। সেখান থেকে যন্ত্রচালিত নৌকা ভাড়া করে টাঙ্গুয়ার হাওরে যাত্রা করা যায়। নৌকায় ভ্রমণের সময়, জল ক্রমশ স্বচ্ছ হতে থাকে এবং জলের তলায় মাছ ও কাঁকড়ার চলাফেরা স্পষ্ট দেখা যায়। দিন শেষে, টাঙ্গুয়ার হাওরে সূর্যাস্তের নয়নাভিরাম দৃশ্য মনমুগ্ধকর এবং স্মৃতির পাতায় অক্ষয় হয়ে থাকে।
ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম