আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা  জনগণকে তাঁর দলের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকায়’ ভোট দেওয়ার মাধ্যমে দলের বিজয় নিশ্চিত করে, বিএনপি-জামায়াতের নৃশংসতার যোগ্য জবাব দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে আগামী ৭ জানুয়ারি’র নির্বাচন অনুষ্ঠান, দেশের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ অপরাহ্নে রাজধানীর তেজগাঁওস্থ ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে  ৫টি জেলা ও ১টি উপজেলার নির্বাচনী ভার্চুয়াল জনসভায় দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন। রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা, রাজশাহী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের নির্বাচনী জনসভায় তিনি এই ভাষণ দেন। পরে তিনি পর্যায়ক্রমে এসব এলাকার নির্বাচনী সভায় মতবিনিময় করেন।

শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাসকে ‘দুর্বৃত্তপরায়ণতা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন,  “এদের এই দুর্বৃত্তপরায়ণতার জবাব দিতে হবে আপনাদেরকে,  বাংলাদেশের মানুষকে। আপনারা নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়যুক্ত করে এর জবাব দেবেন এবং উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখবেন -সেটাই আমরা চাই।” তিনি বলেন, এই নির্বাচনে যেমন আমাদের নৌকার প্রার্থী আছে, সেই সাথে সাথে আমরা এই নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছি, কাজেই আপনাদের ভোট আপনারা যাকে খুশি পছন্দের প্রার্থীকে দিতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’- এটা আমাদের স্লোগান। কাজেই আপনাদের পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দেবেন, রকম কোনরকম গ-গোল আমি চাইনা। আপনাদেরকে সহনশীলতা দেখাতে হবে। নির্বাচনে যার যার ভোট সে সে শান্তি মত দেবে। এতে কোন দ্বিধাদ্বন্দ্ব যেন না থাকে এবং সে পরিবেশটা আমাদের রক্ষা করতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে, এই নির্বাচনটা বাংলাদেশের জন্য একান্তভাবে জরুরী। আর এই বাংলাদেশ নিয়ে তো অনেকে অনেক রকম খেলা অনেকে খেলতে চায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাস করে না। এদেশে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, জাতির পিতার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ যারা নিষিদ্ধ করে দেয়, মুক্তিযুদ্ধ চেতনা যারা ধ্বংস করে, তারা এই দেশটাকেই ধ্বংস করতে চায়। তারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলবে। কাজেই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সেই লক্ষ্য নিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে মানুষ তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে। যার যার নিজের ইচ্ছামতো ভোট দেবে। এখানে কেউ কাউকে বাধা দিতে পারবে না, কোনরকম সংঘাত আমি চাই না। তাঁর সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধার উল্লেখ করে এবং কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার, ঘরে ঘরে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবাকে জনগণের হাতের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসা সহ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপন ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ডিজিটাল সেন্টার ও ইনকিউবেশন সেন্টার করে দেওয়ার মাধ্যমে দক্ষ তরুণ প্রজন্ম গড়ে তোলার পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তিনি। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ও তথ্য প্রযুক্তিকে জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে এসে তাঁর প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যেরও খন্ডচিত্র তুলে ধরেন।

আরও পড়ুন:  গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার ফলে দেশে একটি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আমরা নিয়ে আসতে পেরেছি। তাই দেশের উন্নয়নটা আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় বিএনপি জামাতের চরিত্রটা হচ্ছে দুর্নীতি করা আর মানুষ খুন করা । তারা অগ্নি সন্ত্রাস করে মানুষ হত্যা করে। এর থেকে জঘন্য কাজ আর কিছু হতে পারে না। ২০১৩ এবং ১৪ সালে যেমন অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, ঠিক সেই ভয়াল রূপ নিয়ে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে  আবারো তারা মানুষের সামনে হাজির হয়েছে। রেলের ফিসপ্লেট খুলে ফেলেছে রেল লাইনচ্যুত হয়ে মানুষ মারা গেছে, রেলের বগিতে আগুন দিয়েছে। ছেলেকে বুকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছিল মা, দুজনেই পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছে। এ দৃশ্য সমগ্র বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে।  প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করেছে, বিচারপতিদের কোয়াটারে হামলা করেছে। তিনি বলেন,মানুষ হত্যার জন্য ফাঁদ পাতে তারা। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে, পুলিশকে কিভাবে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে আপনারা দেখেছেন, বাসে আগুন দিচ্ছে গাড়িতে আগুন দিচ্ছে। একের পর এক এ ধরনের জঘন্য কর্মকান্ড তারা ঘটিয়ে চলেছে।

আরও পড়ুন:  চীন সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন চলছে

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জনগণের ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল খালেদা জিয়া। থাকতে পারেনি। ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না। আন্দোলনের মধ্যদিয়ে খালেদা জিয়ার পতন ঘটে। ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হয়। তারপর পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু ওদের শিক্ষা হয়নি। তাই আবারও ২০০১ সালে ভোট কারচুপি, ভোট চুরি, জনগণের ভাগ্য নিয়ে খেলা শুরু করে। এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরী করে নির্বাচনে জিততে চেয়েছিল। তাদের দুঃশাসনের কারণেই দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়। ২০১৩ ও ১৪ সালের অগ্নিসন্ত্রাস এবং ২০১৮ সালে বিএনপি’র নির্বাচনের নামে মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে তাদের দলের ভরাডুবির উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েই ২০০৮ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে ৩০ আসন আর আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩আসনে বিজয়ী হয়। অন্য আসানগুলো আওয়ামী লীগের শরীক দলগুলো পেয়েছিল। যে কারণে তারা এখন নির্বাচন বানচাল করতে চায়।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই এই নির্বাচনটা সত্যিকার অর্থে একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে। যে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণ তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে। যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সুগম হবে। আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচন, এই নির্বাচনে আমরা সফল হব, জনতার জয় হবে।

ভাচুয়ালি যুক্ত এদিনের জনসভাগুলোতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, সংশ্লিষ্ট জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা,থানা,পৌর আওয়ামী লীগ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর নির্বাচনী এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। এসব এলাকার প্রার্থীদেরকে জনগণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের জন্য নৌকায় ভোট প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন:  বিএনপি ভোট বর্জন করেছে, জনগণ বিএনপিকে বর্জন করেছে: তথ্য প্রতিমন্ত্রী

গত ২০ ডিসেম্বর  সিলেটে হজরত শাহজালাল (রহ.) ও হজরত শাহ পরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত এবং  এরপর সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে নির্বাচনী জনসভার মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন আওয়ামী লীগ প্রধান। গতকাল ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক বিশাল নির্বাচনী সমাবেশে বক্তৃতা করেন তিনি। ৩০ ডিসেম্বর, শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়ায় জনসভায় ভাষণ দেন, যেটি তার নির্বাচনী এলাকাও ছিল এবং ঢাকায় ফেরার পথে মাদারীপুরের কালকিনিতে আরেকটি জনসভায় ভাষণ দেন। আগের দিন দিন বরিশালের বঙ্গবন্ধু উদ্যানে এব বিশাল নির্বাচনী সভায় ভাষণ দান শেষে টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধি সৌধে পুস্তসতবক অর্পণ করে অবিসংবাদিত এই নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর পৈত্রিক নিবাসে রাত্রিযাপন করেন। তিনি ২৬ ডিসেম্বর রংপুর সফর করেন এবং তারাগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগের তেজগাঁও কার্যালয় থেকে তিনি বেশ কয়েক দফায় বিভিন্ন জেলার নির্বাচনী সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য প্রদান করেন। এছাড়া ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিনে তিনি রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়া চক্র মাঠে নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ প্রদান করেন।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী ৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে জনসভার মধ্য দিয়ে দলীয় প্রধানের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করার কথা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *