প্রতীক পেয়েই ভোটের লড়াইয়ে মুখোমুখি মিতা-জামাল

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে ভোটের হাওয়া লাগলো দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। সেইসাথে শুরু হল নির্বাচনী প্রচারণা। চট্টগ্রাম-৩, সন্দ্বীপ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা নৌকা প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এর সভাপতি ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন ‘ঈগল’ প্রতীক। 

প্রতীক পেয়েই প্রচারে ভোটের মাঠে মুখোমুখি দুই প্রার্থী। নৌকার প্রার্থী বলেন, “সন্দ্বীপে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নজিরবিহীন উন্নয়ন করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আসন্ন নির্বাচনে আবারও সন্দ্বীপের মানুষ নৌকাকেই নির্বাচিত করতে হবে।”

এদিকে ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরীর আশ্বাস, জয়ী হলে সন্দ্বীপের নৌ পরিবহন খাতের সমস্যা সমাধান, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং মাদকমুক্ত সন্দ্বীপ গড়ে তুলবেন তিনি।   

স্বতন্ত্র হলেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা হওয়ায় জামাল উদ্দিন চৌধুরীও এই আসনের হেভিওয়েট প্রার্থী। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আওয়ামী লীগের ভোট ভাগ হয়েছে দুই ভাগে। আর টান টান উত্তেজনা দুই শিবিরেই।

এই দুই প্রার্থীর পাশাপাশি নির্বাচনে অংশ নিবেন আরও ৬ প্রার্থী। তবে এই আসনের ভোটাররা বলছেন তাদের চোখ হেভিওয়েট দুই প্রার্থীর দিকেই। এখন শুধু দেখার পালা, হাওয়া লাগে কার পালে। তৃতীয়বার জয়ী হয়ে নৌকার প্রার্থী মিতার হ্যাট্রিক, নাকি নতুন মুখ ডা. জামাল এই প্রশ্নের উত্তর মিলবে ৭ জানুয়ারি।

সোমবার সকালে চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে থেকে এই প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  ঈদে সবার জীবনে নেমে আসুক সুখ ও শান্তি : প্রধানমন্ত্রী

নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ১৫ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করে। তফসিল অনুযায়ী, ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারণা চালানো যাবে। ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।

যাচাই-বাছাই ও আপিল নিষ্পত্তি শেষে গতকাল রোববার ইসি জানায়, ২৭ রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন।

তফসিল অনুযায়ী, রবিবার ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।

প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

তফসিল অনুযায়ী, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল, ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর বাছাই, ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর আপিল ও শুনানি, ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিল ছিল। আর ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের দিন ধার্য করা হয়। ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত প্রচারের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুসারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটে লড়তে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন ২ হাজার ৭১৬ জন। তাদের মধ্যে ৩০০ আসনে ১ হাজার ৮৯৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ শরিক ১৪ দলকে ৬টি, জাতীয় পার্টিকে ২৬ আসনে ছাড় দিয়ে ২৬৩ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। তবে, নির্ধারিত তারিখের আগে বিভিন্ন নির্বাচনী সভার আয়োজন করায়, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে প্রার্থীদের শোকজ ও তলব করেছে ইসি।

আরও পড়ুন:  অযৌক্তিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছি’ অভিযোগ করে জাতিসংঘকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চিঠি

এবারের নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর, যাচাই-বাছাই ১-৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল ও শুনানি ৬-১৫ ডিসেম্বর। মোট ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে ৭৪৭ জন ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

সন্দ্বীপ সংসদীয় আসনে চূড়ান্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ৮ প্রার্থী। তাঁরা হলেন- ১. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা (নৌকা প্রতীক) ২. স্বতন্ত্র প্রার্থী স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. জামাল চৌধুরী (ঈগল) ৩. জাতীয় পাটির মনোনীত উপজেলা জাতীয় পাটির সভাপতি এম এ সালাম (লাঙ্গল) ৪. জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের মনোনীত কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি নুরুল আকতার (মশাল) ৫. চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এনপিপি মনোনীত প্রার্থী বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মুকতাদের আজাদ খান (আম) ৬. বাংলাদেশ সুপ্রিম পাটি’র কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল আনোয়ার হিরণ (একতারা) ৭. বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ উল্ল্যাহ খান (মোমবাতি) ৮. ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহিম আজাদ (চেয়ার)।

জাতীয় সংসদের ২৮০, চট্টগ্রাম-৩ সন্দ্বীপ সংসদীয় আসন ১৫টি ইউনিয়ন পরিষদ ও একটি পৌরসভা নিয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ গঠিত। এই উপজেলার মোট ৮৪টি ভোট কেন্দ্র ও মোট বুথ ৫৭২টি। মোট ভোটার রয়েছে ২,৪১,৯১৪ জন।

উল্লেখ্য, মাহফুজুর রহমান মিতার বাবা সন্দ্বীপের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মুস্তাফিজুর রহমান। তিনি ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে সন্দ্বীপ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ডা. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। অপরদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি আনারস প্রতীকে পান ৩৪ হাজার ভোট। আওয়ামী লীগে দু’জন প্রার্থী থাকায় সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তফা কামাল পাশা জয়ী হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে দলের টিকেট পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন মাহফুজুর রহমান মিতা। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে পুনরায় বিজয়ী হন। একাদশ সংসদে তিনি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। গত ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে জয়ের স্বাদ পেয়েছেন পৃথক চার দলের প্রার্থীরা। তবে গত দুই নির্বাচনে জয়ী হয়েছে নৌকা। এর আগে নৌকা পেতে সন্দ্বীপ থেকে একডজন নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *