শ্রেষ্ঠ জয়িতা সম্মাননা পেলেন সন্দ্বীপের নারী উদ্যোক্তা আসমা হুমাইরা

কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

নারী মুক্তি, শিক্ষা ও জাগরণের জন্য অবিস্মরণীয় এক ঐতিহাসিক ব্যক্তি বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত। তিনি সমাজে আলোকবর্তিকা হয়ে নারী সমাজকে পথ দেখিয়েছিলেন। একসময়ের সামাজিক কুসংস্কারে পিছিয়ে পড়া নারী সমাজকে সকল অসংগতির বিরুদ্ধে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। নারীদের সাহসী, পরিশ্রমী এবং জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে সমাজ পরিবর্তনে মনোনিবেশ করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। সেই থেকে নারী জাগরণের সূত্রপাত হয়েছিল। পুরুষ শাসিত সমাজে নারীরা একসময় ভোগ আর দাসী হিসেবে গণ্য করা হতো। সেই নারী জাগরণের আন্দোলনের পর থেকে আজ নারীরা শিক্ষিত ও আত্মপ্রত্যয়ী।

আজ ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবস। এই উপলক্ষে ‘শেখ হাসিনার বার্তা নারী-পুরুষ সমতা, নারীর জন্য বিনিয়োগ সহিংসতা প্রতিরোধ’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে রোকেয়া দিবস উপলক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলার নারী উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেরা জয়িতাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসার হাত থেকে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করেন নারী উদ্যোক্তা আসমা হুমাইরা ভূঁইয়া।

আরও পড়ুন:  সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষা করবে: ড. ইউনূস

আসমা হুমাইরা ভূঁইয়া। ডিগ্রী প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি সন্দ্বীপ উপজেলার বাউরিয়া ইউনিয়নে। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্লক-বাটিকের কাজ শেখার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। উপজেলার অধীনে ব্লক ও বাটিকের কাজ শেখার সময় যাতায়াত ভাড়া হিসেবে যে অর্থ (৫০০০ টাকা) তাকে প্রধান করা হয় সে অর্থই আসমার আত্মকর্মসংস্থানের মূল পুঁজি ছিল। এই পুঁজি দিয়েই সুদীর্ঘ পথের যাত্রা শুরু হয়। কিছুদিন পরেই তার ব্যবসায় বাড়ানোর জন্য পুঁজির প্রয়োজন হয়। এসময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নেয়ার মাধ্যমে তার ব্যবসায়ের পরিধি আরো বৃদ্ধি পায় এবং খুব অল্প সময়ের মাঝে ঋণ পরিশোধ করেন আসমা। এরপর সফলতার দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে যান। শুধু ব্লক বাটিকেই থেমে থকেননি তিনি। কৃষি অফিস থেকে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রশিক্ষণ নিয়ে সফলভাবে সার উৎপাদন শুরু করেন। বর্তমানে তার ব্লক-বাটিক এবং সার ব্যবসা দুটোরই চমৎকার প্রসার ঘটেছে।

আরও পড়ুন:  মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ রবিবার

তার এ উদ্যোগ তিনি নিজের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেননি, ছড়িয়ে দিয়েছেন তারই মতো সম্ভাবনাময় নারী উদ্যোক্তাদের মাঝে। সোনালী লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড সন্দ্বীপ শাখার কিছু গ্রাহকদের নিজের ব্যবসায়ের সাথে সংযুক্ত করে নতুন উদ্যোক্তা সমাজ সৃষ্টি করছেন আসমা। এখন আসমা শুধু নিজেই স্বাবলম্বী নন, স্বাবলম্বী করেছেন আরও অনেককে। পরিবারকে সহায়তা করতে পারছেন তিনি। আর তাঁর এই বদলে যাওয়া জীবন দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন আশেপাশের অনেকে।

সম্মাননা প্রাপ্তির পর আসমা একুশে টেলিভিশনের প্রতিবেদককে বলেন, চারিদিকে দিন বদলের ডাক এসেছে, নারীরা সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে উদ্যোক্তা সমাজ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ঋণ প্রাপ্তি সহজতর হচ্ছে। নারীদের ইচ্ছে শক্তি থাকলে কোনো বাধাই আমাদের পথ অবরুদ্ধ করতে পারবেনা। আমার এ যাত্রায় আমার পরিবারসহ যারা সমর্থন দিয়েছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অদূরে ভবিষ্যতে আমার হাত ধরেই সন্দ্বীপের হাজারো তরুণীকে স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছি। আমি বিশেষ করে ধন্যবাদ দেব সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশনকে। এই সংগঠন সন্দ্বীপে তরুণদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তরুণদের উন্নয়নে তাদেরকে নানাভাবে উৎসাহিত করছেন। আমি এখানে জেগে উঠার প্রেরণা পেয়েছি। উল্লেখ্য, আসমা হুমাইরা ভূঁইয়া সন্দ্বীপ ফ্রেন্ডস সার্কেল অ্যাসোসিয়েশনের এবি কলেজ শাখার একজন সক্রিয় সদস্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *