উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম রেল যোগাযোগ

উত্তর পূর্ব ভারতের সঙ্গে প্রথম রেল যোগাযোগ স্থাপিত হলো বাংলাদেশের। আখাউরা-আগরতলা রেল যোগাযোগের উদ্বোধন করলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে উদ্বোধন হলো খুলনা-মংলা বন্দর রেল যোগাযোগ এবং মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের।

বুধবার বেলা ১১টা নাগাদ ভার্চুয়ালি দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন। আনুষ্ঠানিকউদ্বোধনের পর প্রথমে বক্তৃতা দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে নিজের মতামত জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, খুলনা-মংলা রেল যোগাযোগ তৈরি হওয়ায় মংলা এবং খুলনা বন্দর ভারতের জন্যও খুলে গেল। এই দুই বন্দর ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে স্বাগত জানাচ্ছে। এবিষয়ে কথা বলার সময় নরেন্দ্র মোদি জানান, মংলা বন্দরের সঙ্গে কলকাতার সরাসরি যোগাযোগ তৈরি হলো। এর ফলে দুই দেশের বাণিজ্য আরো উন্নত হবে বলে তিনি মনে করেন। একইভাবে আখাউরা-আগরতলা লাইন তৈরি হওয়ায় ঢাকা-আগরতলা-কলকাতার সম্পর্ক তৈরি হলো। বস্তুত, আগরতলা-আখাউরা রেল যোগাযোগ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম রেল সম্পর্ক।

আরও পড়ুন:  ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

রামপালে মৈত্রী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও দুই প্রধানমন্ত্রী উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা জানিয়েছেন, মৈত্রী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ইতিমধ্যেই বাংলাদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিট নিয়েও তিনি ইতিবাচক। এই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে। হাসিনার কথায়, ‘এর ফলে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম কমবে। যে সংস্থাগুলো এখন বিদ্যুৎ তৈরি করে তাদের সামনে প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।’

প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ভারত সরকারের অন্যতম প্রকল্প। বাংলাদেশকে এনার্জি সেক্টরে স্বাবলম্বী করে তুলতে চায় ভারত।’ মোদি জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ ডিজেল পাইপলাইনও তৈরি হয়েছে। এছাড়াও গত নয় বছরে দুই দেশের বাণিজ্য তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। নতুন দুই রেল যোগাযোগ এই সম্পর্ক আরও বাড়াতে সাহায্য করবে।

নিজের বক্তৃতার শেষ পর্বে সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘মুজিব দ্য মেকিং অফ দ্য নেশন’ ছবির উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ উদ্য়োগে তৈরি হওয়া শ্যাম বেনেগলের এই ছবির জন্য মোদিকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। দুই দেশেই ছবিটি একই সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন:  অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি: ড. ইউনূস

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, দুইটি রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাই দুই দেশের সম্পর্কের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগের প্রয়োজন ছিল বলেই তাদের অভিমত। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীও এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং নীতি আয়োগে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশেষজ্ঞ সুমন মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ‘এই রেল যোগাযোগ দুই দেশের বাণিজ্যে অনেকটা সুযোগ বাড়াবে। এতদিন ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্ব হয়ে বাংলাদেশে পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে ২২ কিলোমিটারের হেনস নেক বা বটল নেক রাস্তার উপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হতো। নতুন রেল যোগাযোগ সেই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করবে।’

মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে তার বক্তব্য, ভারত এই বন্দর ব্যবহার করতে পারলে এশিয়ায় ভারতের ভূরাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়বে। চীনের ওই বন্দরের দিকে নজর ছিল।

আরও পড়ুন:  মিরাজের ঘটনার তাৎপর্য ও শিক্ষা

ভারত-নেপাল-বাংলাদেশকে নিয়ে যে এনার্জি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মোদি তারও প্রশংসা করেছেন সুমন। তার বক্তব্য, ভারতের এই পদক্ষেপও আগামী দিনে ভূরাজনীতিতে ভারতের ক্ষমতা অনেকটা বাড়াতে সাহায্য করবে। যদিও কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্য়াপক ইন্দ্রজিৎ রায় সুমনের সঙ্গে সম্পূর্ণ এক মত নন। তার বক্তব্য ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এমন নয় যে গত নয় বছরেই এই সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এদিন যে নতুন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন হয়েছে, তা দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার মধ্যে ছিল।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *