মোহাম্মদ ফয়সাল আলম:
টাংগুয়ার হাওরের গুরুত্ব ও পরিবেশ রক্ষা করার জন্য স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক। এর মাধ্যমে এই প্রাকৃতিক সম্পদকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য টিকিয়ে রাখা যাবে।
হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে টাংগুয়ার হাওর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকৃতি ও সৌন্দর্য পিপাসু পর্যটকদের আগমনে ভরপুর হয়ে যায়। পর্যটকরা হাউসবোড ও নৌকায় এসে হাওরে ঘুরতে আসেন। এই পর্যটক পরিবহনকারী যানবাহনগুলো হাওরে এসেই কান্দায় থাকা করচ গাছে নৌকা নোঙর করে এবং প্রচন্ড আঘাতে গাছগুলোতে নৌকা ও হাউসবোডের রশি বাঁধা হয়। এছাড়াও, নৌকা ও হাউসবোডের চলাচলের ফলে করচ গাছগুলো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
টাংগুয়ার হাওরটি নয় কুড়ি কান্দার ছয় কুড়ি বিল নিয়ে গঠিত বিশাল একটি হাওর। তবে অরক্ষিত ও অব্যবস্থাপনার কারণে এটি অস্তিত্ব হারাচ্ছে। হাওরের চারপাশের কান্দা, গাছ, মাছ ও অতিথি পাখির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিশেষত বর্ষা মৌসুমে দেশি-বিদেশি প্রকৃতিপ্রেমী পর্যটকদের আগমন বেড়ে যায়, এবং আগত পর্যটকদের মধ্যে বেশিরভাগই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
ওয়াচ টাওয়ারে উঠে হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। পর্যটকরা হাওরের স্বচ্ছ পানিতে গোসল করে, নৌকায় ভাসমান দোকান থেকে চা নিয়ে, বিস্কুট ও পটেটো চিপস খেয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন। অনেকেই ছোট নৌকা নিয়ে করচ বাগানে ঘুরে বেড়ান এবং স্মৃতি ধরে রাখার জন্য ছবি তোলেন। এছাড়া, হাউস বোট ও নৌকায় বসে স্থানীয় ছোট ছোট শিশুর কণ্ঠে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া গান শোনারও অভিজ্ঞতা লাভ করেন।
এই আনন্দময় কার্যকলাপের সাথে সাথে কিছু নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে হাওরের পরিবেশের ওপর। পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ঘোরাফেরা এবং তাদের ব্যবহার করা পানির বোতল, প্লাস্টিকের পণ্য, এবং মল-মূত্র হাওরের পানিতে ফেলার ফলে পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
সমস্যার সমাধানে কিছু সুপারিশ:
কঠোর পর্যটন নীতি: পর্যটকদের জন্য কঠোর নিয়মকানুন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা, যাতে তারা হাওরের পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতন হন।
পর্যটকদের সচেতনতা বৃদ্ধি: হাওরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে পর্যটকদের সচেতন করা।
আবর্জনা ব্যবস্থাপনা: হাওরে পর্যটকদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে আবর্জনা ফেলার ব্যবস্থা করা এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ডাস্টবিন স্থাপন করা।
পর্যটন পরিচালনা: হাওরের বিভিন্ন অংশে পর্যটকদের ঘোরাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা এবং নির্দিষ্ট রুট ও স্থান নির্ধারণ করা।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: স্থানীয় জনগণকে পর্যটকদের সচেতন করতে এবং হাওরের পরিবেশ রক্ষায় সম্পৃক্ত করা।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা হলে টাংগুয়ার হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং পর্যটকদের জন্যও একটি সুন্দর ও পরিষ্কার পরিবেশ নিশ্চিত করা যাবে।
ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম