বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেন, এতদিন রিজার্ভ মানিকে অপারেটিং টার্গেট বিবেচনায় নিয়ে বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে মূল্যস্তরের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার লক্ষ্যে মুদ্রানীতির কার্যক্রম পরিচালিত হতো। তবে আগামী অর্থবছর থেকে এ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে মুদ্রানীতির অপারেটিং টার্গেট হিসেবে সুদহারকে বিবেচনায় নেওয়া হবে। এর মাধ্যমে বাজারে অর্থের জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এছাড়া আগামী জুলাই থেকে এর সুদহার করিডর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ব্যবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে।
মুদ্রানীতি কাঠামোয় সুদহারের করিডর : পাশের দেশ ভারতের মুদ্রানীতির আদলে মুদ্রানীতি কাঠামোয় করিডর প্রথা চালু করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ ব্যবস্থায় পলিসি রেটকে একটা পর্যায়ে রেখে সুদহারের একটি করিডর দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কলমানি বা পলিসি রেটের মতো শর্টটার্ম সুদহারকে টার্গেট করা হবে। এ রেটেই বাজারে অর্থের সরবরাহ বাড়নো-কমানো হবে, যাতে বাজারে অতিরিক্ত টাকা না থাকে, আবার ঘাটতিও না হয়। অর্থাৎ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে টাকা ধার দেওয়া-নেওয়ার ক্ষেত্রে ওই করিডরের আওতায় পৃথক রেট থাকবে। এর একটি হলো লেন্ডিং রেট, অপরটি হলো ডিপোজিট রেট। বাজারে যখন অতিরিক্ত তারল্য থাকবে, সেটা তুলে নেওয়ার জন্য ডিপোজিট রেট প্রয়োগ করা হবে। আর যখন ব্যাংকগুলোতে অর্থের সংকট থাকবে, তখন তাদের অর্থ ধার দেওয়ার জন্য লেন্ডিং রেট প্রয়োগ করা হবে।
ব্যাংক ঋণের সুদহারের করিডর : আগামী জুলাই থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহারের সীমা তুলে দিয়ে একটি সুদহার করিডর ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ ব্যবস্থায় ব্যাংক ঋণের সুদহার নির্ধারণ হবে ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে। ট্রেজারি বিলের সুদহারের সঙ্গে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ পর্যন্ত যোগ করা যাবে। নতুন এ ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শর্টটার্ম মান্থলি এভারেজ রেট’ বা স্মার্ট।
চালু হবে একক বিনিময় হার : আগামী মুদ্রানীতিতে বিনিময় হার নির্ধারণের পদ্ধতি এবং তা বাস্তবায়নের বিষয়ে ঘোষণা থাকবে। মুদ্রা বিনিময়ের হার ক্রমান্বয়ে বাজারভিত্তিক করার লক্ষ্যে বিদ্যমান একাধিক মুদ্রার বিনিময় হারের মধ্যে ব্যবধান ন্যূনতম পর্যায়ে আনার ওপর জোর দেওয়া হবে। অর্থাৎ আমদানি, রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও নগদ কেনাবেচায় ডলারের বিনিময় একটির সঙ্গে আরেকটির পার্থক্য সর্বোচ্চ ২ শতাংশের মধ্যে রাখার ঘোষণা আসতে পারে।
থাকবে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন : আগামী জুলাই থেকে আইএমএফের মানদণ্ড মেনে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাবায়ন দেখাতে শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণ বাবদ অর্থ রিজার্ভ থেকে বাদ দিয়ে দেখানো হবে। গত বুধবার দিনশেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের নিয়মে হিসাব করলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ নেমে আসবে ২৪ বিলিয়নেরও নিচে।