হুমকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওরে অবাধে মৎস্য নিধন, করচ গাছ কর্তন

মোহাম্মদ ফয়সাল আলম: 

টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। এটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপার লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার টাঙ্গুয়ার হাওরকে বিপন্ন প্রতিবেশ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে এবং ২০০০ সালে ইউনেস্কো এটিকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

হাওরটি বিরল প্রজাতির মাছ এবং অতিথি পাখির স্বর্গরাজ্য হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীব্যাপী অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন ২৬ প্রজাতির প্রাণীরও আবাসস্থল এটি। তবে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অবাধ বিচরণ, যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা, এবং গাছপালা নষ্ট করার ফলে এখানকার জীববৈচিত্র্য বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে।

টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকবাহী হাউসবোড ও নৌকার অবাধ বিচরণের কারণে সেখানে থাকা শত শত করচ গাছ হুমকির মুখে পড়েছে। পর্যটকদের অসচেতনতার ফলে এবং হাউসবোড ও নৌকার চলাচলের কারণে বর্ষা মৌসুমে গাছগুলো আঘাতপ্রাপ্ত হয়, যা তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় অনেক গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে এবং আরও অনেক গাছ একই ধরনের বিপদের সম্মুখীন।

আরও পড়ুন:  ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে

হাওর, নদী ও পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন বাংলাদেশের মতে, হাওরের গাছ বিলীন হলে প্রকৃতি ও পরিবেশ হুমকির মুখে পড়বে, বিশেষত দেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার ক্ষেত্রে। হাওরের প্রকৃতি, সৌন্দর্য, ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এই গাছগুলো রক্ষা করার জন্য জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পর্যটকদের সচেতন করা: হাওরের সংবেদনশীল পরিবেশ সম্পর্কে পর্যটকদের সচেতন করার জন্য প্রচারণা চালানো।

নিয়ন্ত্রিত নৌকা চলাচল: হাওরের ভেতরে নৌকা ও হাউসবোডের চলাচলের জন্য নির্দিষ্ট রুট ও সময় নির্ধারণ করা।

নিরাপত্তা বেড়ি স্থাপন: গাছগুলোকে আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য নিরাপত্তা বেড়ি স্থাপন করা।

পর্যটন নীতি প্রণয়ন: পরিবেশ বান্ধব পর্যটনের জন্য নীতি প্রণয়ন করা যাতে পর্যটন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা যায়।

আরও পড়ুন:  হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে খালেদা জিয়াকে

স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কাজ করে গাছ রক্ষার প্রচেষ্টায় তাদের সম্পৃক্ত করা।

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার মাদার ফিসারিজ খ্যাত টাংগুয়ার হাওর স্থানীয় লোকজনের কাছে নয়কুড়ি কান্দার ছয়কুড়ি বিল নামেও পরিচিত। প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই হাওরটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মিঠা পানির জলাভূমি। টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট, প্রথমটি সুন্দরবন।

এই হাওরটি ১৮টি মৌজায় ৫১টি হাওরের সমন্বয়ে গঠিত এবং মোট ৯,৭২৭ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত, যা জেলার সবচেয়ে বড় জলাভূমি। প্রধান হাওরের পানির এলাকা প্রায় ২৮ বর্গকিলোমিটার, আর বাকি অংশ কৃষিজমি ও ৬৮টি গ্রামের মানুষের বসতিবাসে ব্যবহৃত হয়।

 

ডাক দিয়ে যাই // মোহাম্মদ ফয়সাল আলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *