মোহাম্মদ ফয়সাল আলম: বায়ুমন্ডলের গ্রিন হাউস গ্যাস হল তাপীয় অবলোহিত সীমার মধ্যে বিকিরিত শক্তি শোষণ ও নির্গত করার ফলে তাদের সংক্রমিত বায়ুমন্ডল কার্বন ডাইঅক্সাইড, মেথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ওজন এবং মোনোগাস হল। এগুলোর মধ্যে বৈদ্যুতিন অক্সিজেন, এক্সনসী, এবং এক্সনোডে অস্তিত্ব রাখে।

গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এদের উপস্থিতির কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু অতিরিক্ত গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং ঘটে।

গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো নিম্নরূপ:

  • এটি সবচেয়ে প্রচুর পরিমাণে থাকা গ্রিন হাউস গ্যাস, যা প্রাকৃতিকভাবে বায়ুমণ্ডলে পাওয়া যায়।
  • শিল্প বিপ্লবের পর থেকে এর পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো, বন উজাড় ইত্যাদি এর প্রধান উৎস।
  • প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদন ও পরিবহন, কৃষি ক্রিয়াকলাপ, এবং ভূমিক্ষয় থেকে নির্গত হয়।
  • প্রধানত কৃষিকাজের জন্য ব্যবহৃত সার, শিল্প প্রক্রিয়া ও জ্বালানি পোড়ানোর ফলে নির্গত হয়।
  • বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে (স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার) ওজোন স্তর রয়েছে যা আমাদের সূর্যের ক্ষতিকর UV রশ্মি থেকে রক্ষা করে। তবে বায়ুমণ্ডলের নিচের স্তরে (ট্রপোস্ফিয়ার) ওজোন গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে কাজ করে।
  • প্রধানত শিল্পে ব্যবহৃত হয় এবং এটি ওজোন স্তর ক্ষয় করে।
  • প্রধানত বিভিন্ন রেফ্রিজারেশন ও এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমে ব্যবহৃত হয়।
আরও পড়ুন:  পর্তুগালকে হারিয়ে ইউরোর সেমিতে ফ্রান্স

শিল্প বিপ্লবের পর থেকে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমনের কারণে যে পরিমাণ পরিবেশগত পরিবর্তন হয়েছে, তা ভবিষ্যতে আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে। এজন্য আমাদেরকে টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে।

গ্রিন হাউস গ্যাস এবং বায়ুমণ্ডলের গঠন: বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব নির্ধারিত হয় তার উৎস ও ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পরিমাণের ওপর। নির্গত গ্যাসের যে অংশ বায়ুমণ্ডলে থেকে যায় তাকে ‘বায়ুবাহিত ভগ্নাংশ’ বা (Airborne Fraction) বলে।

  • নাইট্রোজেন (N₂): প্রায় ৭৮%
  • অক্সিজেন (O₂): প্রায় ২১%
  • আর্গন (Ar): প্রায় ০.৯৩%

অন্যান্য গ্যাস:

  • মনোঅক্সাইড (CO) এবং হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl): এই গ্যাসগুলো অবলোহিত রশ্মি শোষণ করলেও তাদের সক্রিয়তা ও দ্রবণীয়তার কারণে বায়ুমণ্ডলে অল্প সময়ের জন্য থাকে। ফলে তারা গ্রিন হাউস গ্যাস হিসেবে বিবেচিত হয় না।

গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া: গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠ থেকে বিকীর্ণ তাপ বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো দ্বারা শোষিত হয়ে আবার বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়।

  • সূর্য থেকে আগত রশ্মি ভূপৃষ্ঠে আঘাত করে এবং তাপ উৎপন্ন করে।
  • ভূপৃষ্ঠ থেকে এই তাপ বিকিরিত হয় অবলোহিত রশ্মি হিসেবে।
  • বায়ুমণ্ডলীয় গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো এই অবলোহিত রশ্মি শোষণ করে।
  • শোষিত তাপ আবার বায়ুমণ্ডলের অভ্যন্তরে বিকিরিত হয়, যার কিছু অংশ ভূপৃষ্ঠে ফিরে আসে।
আরও পড়ুন:  পোর্ট ভিলাতে ৭.৩ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা জারি

আপনার উপরের ব্যাখ্যার মধ্যে সূর্যের বিকিরণ একটি মুখ্য অংশ যা বায়ুমণ্ডলের মধ্যদিয়ে অতিক্রম করে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং পরবর্তীকালে পুনরায় বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরে বিকিরিত হয়, যেটি গ্রিন হাউস গ্যাসগুলো দ্বারা শোষিত হয়ে অনেক বেশি শক্তি আকারে ভূপৃষ্ঠে ফিরিয়ে দেয়। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রক্রিয়া যা পৃথিবীর জীববৈচিত্র্য এবং জীবনের সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

শীতপ্রধান দেশগুলোতে, যেমন স্কান্ডিনেভিয়া, গ্রিন হাউস বা প্রাকৃতিক গ্রিন হাউসে উদ্ভিদ উৎপাদন করার পদ্ধতি একটি উত্তম পদ্ধতি হতে পারে। এই পদ্ধতিতে সূর্যের বিকিরণ কাচের কাঠামোর মধ্যে পরিচলন ব্যতিরেকে ধরে রাখা হয়, যা পৃথিবীতে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার প্রাণের সৃষ্টি করতে সহায়তা করে।

এই প্রক্রিয়া পৃথিবীর উষ্ণায়নের প্রাথমিক কারণগুলোর একটি হিসেবে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে, যে পৃথিবীর উষ্ণায়ন অপেক্ষাকৃত গোলানুকলন প্রতিক্রিয়ার সম্মিলিত মডেলে সম্মিলিত হওয়ায় পৃথিবীর অতিসুদ্ধায়ী বৃদ্ধির প্রতি পরিবর্তন ঘটতে

আমাদের পৃথিবী সূর্য থেকে শক্তি গ্রহণ করে এবং তা মূলত সূর্যের অবলোহিত রশ্মির মাধ্যমে ঘটে। এই রশ্মির অংশ মূলত দৃশ্যমান আলো এবং অবলোহিত রশ্মির রূপে পৃথিবীতে প্রবাহিত হয়। এই রশ্মির মোট অংশের প্রায় ৫০% বায়ুমন্ডলের উপরিভাগে থাকে এবং তা পৃথিবীর পৃষ্ঠের কোন অংশে শোষিত হয় না, বরং মৌলিকভাবে পৃথিবীকে উত্তপ্ত করে। উষ্ণ অবলোহিত রশ্মির বিকিরণ করে যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রধানত পৃথিবীপৃষ্ঠে শোষণকৃত তরঙ্গদৈর্ঘ্যর তুলনাই অনেক দীর্ঘ।

আরও পড়ুন:  বিশ্বে জানুয়ারিতে অব্যাহতভাবে কমেছে খাদ্যমূল্য: ফাও

মানুষের বিভিন্ন কার্যকার্ম দ্বারা উত্পন্ন কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বায়ুমন্ডলীয় কর্তৃক বৃদ্ধি পায়, এবং এই কার্বন ডাইঅক্সাইড পৃথিবীর বাহ্যিক এবং আন্তর্জালিক প্রকৃতির প্রতি গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে। জীবাশ্ম জ্বালানি, সিমেন্ট উৎপাদন এবং উষ্ণপ্রধান অঞ্চলের বন উজাড় প্রধানত বৈশ্বিক জলবায়ুর উপর কার্বন ডাইঅক্সাইড এর প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে, যা গ্রিনহাউস প্রতিক্রিয়ার একটি বিশেষ কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *