দাবানলের কারণে জলবায়ু পরিবর্তন পরিবেশগত ক্ষতি

মোহাম্মদ ফয়সাল আলম: দাবানল (ইংরেজি: Wildfire) হলো বনভূমি বা গ্রামীণ এলাকার বনাঞ্চলে সংঘটিত একটি অনিয়ন্ত্রিত আগুন। পাহাড়িয়া অঞ্চলে দাবানলের ইন্ধন বেশি থাকে কারণ উষ্ণ তাপক-শিখা ক্রমশ ওপরের দিকে উঠে বন পোড়াতে থাকে।

উঁচু গাছের ক্যানপির আগুন যত্রতত্র উড়তে থাকে এবং এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে কারণ আগুন থামানোর জন্য সহজে কোনো ব্ল্যাঙ্ক করিডোর তৈরি করা যায় না যেখান থেকে সরিয়ে ফেলা যায় ক্ষুপ, ঝরা পাতা, এবং ভেষজ দাহ্যবস্তুসমূহ।

আগুন যতক্ষণ খুশি আপন মনে জ্বলতে থাকে এবং যখন খাদ্যের প্রচণ্ড অভাব হয় কেবল তখনই এটি মরে যায়, ঠিক দুর্ভিক্ষে মরার মতো। মাটি পুড়ে টেরাকোটা হয়ে যায় এবং এর দরকারি জলশোষণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। এমন দগ্ধ মাটির ওপর ঝুম বৃষ্টি হলে এই আলগা পোড়ামাটি ও কাদা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে পাদদেশে জমে কদর্য বিপুল পাহাড় তৈরি করে, যা সরানো সহজ কাজ নয়।

দাবানলের ফলে ব্যাপক প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ক্ষতি হয়। বিশেষ করে জীববৈচিত্র্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়, মাটি উর্বরতা হারায় এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবিকা বিপন্ন হয়। এছাড়া দাবানল বাতাসের গুণগত মানও হ্রাস করে এবং জলবায়ুর ওপরও প্রভাব ফেলে। দাবানল নিয়ন্ত্রণের জন্য সতর্কতা, পর্যবেক্ষণ, এবং দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন। ফায়ার ব্রেক তৈরি করা, সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

আরও পড়ুন:  মসজিদে মসজিদে শবেকদরের নামাজ

https://dakdiyejai.news/

নিষ্ঠুরতার অনন্য নজির স্থাপন করে চলেছে তাপপ্রবাহ। ইতোমধ্যেই ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রাস করছে তাপের তীব্রতা। আগস্টের শেষের দিকে চীনের বেশির ভাগ অংশে তীব্র তাপ ছড়িয়ে পড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বৈশ্বিক ক্রমবর্ধমান এই তাপমাত্রা মূলত মানব কার্যকলাপের জন্যই সৃষ্ট। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ-আইপিসিসি) নিশ্চিত করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তন তাপপ্রবাহকে আরও বেশি তীব্র করে তোলে এবং অধিকাংশ ভূমি অঞ্চলে বারবার ফিরে আসে।

শিল্প যুগের শুরু থেকেই মানব ক্রিয়াকলাপে সৃষ্ট গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন পৃথিবীকে প্রায় ১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তপ্ত করেছে। ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের জলবায়ু বিজ্ঞানী ফ্রেডেরিক অটো বলেছেন, আজ আমরা যে তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হচ্ছি তা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই সৃষ্ট এবং এটি বারবার ফিরে আসছে। চলতি মাসে নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ইউরোপে তাপপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর মধ্য অক্ষাংশের তুলনায় তিন থেকে চার গুণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। লেখকরা তাপপ্রবাহের এই পরিবর্তনকে জেট স্ট্রিমের সঙ্গে তুলনা করেছেন, যেটি দ্রুত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ছুটছে এবং বর্তমানে উত্তরগোলার্ধে প্রবাহিত।

তাপপ্রবাহের এই তীব্রতা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে বয়স্ক এবং শিশুদের মধ্যে তাপজনিত অসুস্থতা এবং মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। তাপপ্রবাহ কৃষি উৎপাদনকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে, ফলে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়ছে। তাপপ্রবাহ মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যেমন নগর অঞ্চলে সবুজায়ন বৃদ্ধি, শীতল আশ্রয়স্থল তৈরি এবং তাপপ্রবাহের সময়কার জন্য সঠিক সতর্কবার্তা ব্যবস্থা।

আরও পড়ুন:  ৪১ জেলায় নতুন সিভিল সার্জন নিয়োগ দিল সরকার

এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি করার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনকে প্রশমিত করার জন্য বৈশ্বিক প্রচেষ্টা জরুরি।

দাবানলের সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং পরিবেশ শুষ্ক হয়ে পড়ে, যা দাবানলের বিস্তার এবং তীব্রতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গরম আবহাওয়ার কারণে গাছপালা থেকে আর্দ্রতা হ্রাস পেয়ে সেগুলো শুষ্ক জ্বালানিতে পরিণত হয়, যা আগুন ছড়াতে সহায়তা করে।

গত বছর দাবানলের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নে অর্ধ মিলিয়ন হেক্টরেরও বেশি জমি পুড়ে গেছে। এর ফলে ২০১৭ সালের পর ওই অঞ্চলের বনগুলো দ্বিতীয়-নিকৃষ্ট আগুনের শিকার হয়েছে। কোপার্নিকাসের সিনিয়র বিজ্ঞানী মার্ক প্যারিংটন উল্লেখ করেছেন যে, চলমান গরম এবং শুষ্ক অবস্থা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও বেশি বিপজ্জনক করে তুলেছে। উত্তপ্ত তাপমাত্রার সঙ্গে অভ্যস্ত নয় এবং এটি মোকাবিলা করতে অপ্রস্তুত অঞ্চলগুলো দাবানলের দিকে ঠেলে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন

এটি স্পষ্ট যে, দাবানল একটি স্বাভাবিক পরিবেশগত বিপর্যয় নয়, বরং এটি জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট একটি গুরুতর সমস্যা। দাবানলের কারণে ব্যাপক পরিবেশগত এবং অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। গাছপালা এবং প্রাণীর জীবন নষ্ট হয়, বায়ুমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়, যা আরও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ হয়।

  • দাবানল প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
  • প্রযুক্তি এবং স্যাটেলাইট ইমেজিং ব্যবহার করে আগুনের আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা তৈরি করা।
  • জঙ্গল পরিষ্কার করা, আগুন প্রতিরোধক রাস্তা এবং ফায়ার ব্রেক তৈরি করা।
  • স্থানীয় জনগণকে দাবানলের ক্ষতি এবং প্রতিরোধ সম্পর্কে সচেতন করা।
  • কার্বন নিঃসরণ হ্রাস এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়িয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো।
আরও পড়ুন:  অলিম্পিকের দ্রুততম মানব লাইলস

দাবানল মোকাবিলার জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে আমরা আমাদের পরিবেশ এবং সমাজকে রক্ষা করতে পারি। বন ব্যবস্থাপনা এবং ঘর্ষণের উৎসগুলোও বনে আগুনের পেছনে অন্যতম কারণ। ইউরোপের দেশগুলোতে আগুন লাগার ১০ কারণের ৯টিই মানুষের অসাবধানতা ও বিভিন্ন উদ্ভট কার্যকলাপের কারণে সৃষ্ট। বিশেষ করে অগ্নিসংযোগ ও বারবিকিউ বা বিদ্যুতের লাইন থেকে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট দাবানলে পুড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *