”বড়” বনাম “ভালো”-আবু এন এম ওয়াহিদ

শৈশব
বড় হওয়া মানে—
বাবার জুতোর পাশে দাঁড়িয়ে দেখা,
কবে তার মতো হবো!
স্কুলের মাঠে পেন্সিল দিয়ে আঁকা স্বপ্ন—
বিজ্ঞানী, নায়ক, কবি, প্রেসিডেন্ট—
সবাই একে একে আসে,
আবার মিলিয়ে যায় দুপুরের রোদে।

তখন ভালো হওয়া মানে ছিল—
বন্ধুর খাতা ফেরত দেওয়া,
খাঁচার পাখিটাকে বনে নিয়ে মুক্ত করা,
অথবা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে
চুপচাপ হাসা।

যৌবন
বড় হওয়া তখন উচ্চতা মাপার সময়,
কে বেশি জানে, কে বেশি পারে,
কে কাকে হারায় কঠিন প্রতিযোগিতায়।
বড় হওয়া মানে চাকরি, অর্থ, যশ—
সব কিছু পেয়ে ফেলার এক তীব্র ছুটে চলা।

কিন্তু ভালো হওয়া তখনও ফিসফিস করে বলে—
একটা মাটির গন্ধ আছে,
যেটা কোনো সাফল্যের গন্ধে মিশে না;
একটা মানুষের চোখে জল আছে,
যেটা কোনো ট্রফি দিয়ে মুছে ফেলা যায় না।
ভালো হওয়া মানে—
হাত বাড়িয়ে বলা, “তুমি একা নও।”

পরিপক্বতা
বড় হওয়া এখন ঘরের মেঝেতে বাচ্চার হাঁটার শব্দ,
ব্যস্ত দিনের শেষে ক্লান্ত শরীরের বিশ্রাম।
মানুষ বুঝে—
বড় হওয়া মানে পাহাড়ে ওঠা নয়,
সমুদ্রের গভীরতা স্পর্শ করা।

ভালো হওয়া মানে তখন—
নরমভাবে ক্ষমা করতে শেখা,
নিজের অহংকারে চারাফুল রোপণ করা,
এবং প্রতিটি সন্ধ্যায় মনে রাখা—
জীবন কেবল নিজের নয়,
অন্যের নিঃশ্বাসেরও অংশ।

 বার্ধক্য  উপলব্ধি

একদিন আয়নার ভেতর ভাঁজ পড়ে—
চোখের কোণে নিঃশব্দ প্রশ্ন:
সব কিছুর শেষে কী রইল?
বড় হওয়া নাকি ভালো হওয়া?
তখন বুঝি—

ভালো হওয়া মানে মৃত্যুকেও কোমল চোখে দেখা,
যেন একদিন শিশিরের ফোঁটার মতো গলে যাওয়া,
আর পিছনে রেখে যাওয়া
এক অদৃশ্য আলোর দাগ,
যেখানে পৃথিবী একটু বেশি মানুষ হয়ে ওঠে।

উপসংহার
তাই আমি বলি—
”বড় হওয়া ভালো,”
”ভালো হওয়া তার চেয়ে বড়।”
কারণ বড়ো মানুষ আলো পায়,
আর ভালো মানুষ— আলো ছড়ায়।
বড়ো হওয়া শেষ হয় সাফল্যে,
ভালো হওয়া বেঁচে থাকে ভালোবাসায়।

অক্টোবর ৮, ২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *