খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আমরা সালাম দিয়েছি, উনি রিপ্লাই দিয়েছেন। উনি আমাদের চিনতে পেরেছেন।’ তিনি জানান, এর আগেও বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এমন হয়েছিল, তিনি বিশ্বাস করেন এবারও বেগম জিয়া সুস্থ হয়ে উঠবেন।
খালেদা জিয়াকে দেখতে গতকাল বিকেলে হাসপাতালে যান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। পরে হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা দূর থেকে দেখেছি।
গতকাল রাত ১১টা ৪০ মিনিটে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং তাঁর বিশেষ সহকারী মনির হায়দার এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। এ সময় সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছিলেন। বিএনপির আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা ড. আব্দুল মঈন খানও একই সময় হাসপাতালে আসেন। রাত ১২টা ৬ মিনিটে আসিফ নজরুল হাসপাতাল ত্যাগ করেন। জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী এস এম খালিদুজ্জামানও রাতে হাসপাতালে গিয়ে বিএনপির চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্যের খবর নেন। আরো গিয়েছিলেন বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরী। রাতে জুলাই শহীদ মীর মুগ্ধর ভাই মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ ওই হাসপাতালে যান।
দুপুরে নয়াপল্টনের জামে মসজিদে বিএনপি প্রধানের সুস্থতা কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সেখানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘খালেদা জিয়া দুই দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি। গত রাতে ডাক্তাররা বলেছেন, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। গণতান্ত্রিক উত্তরণে সবচেয়ে বড় অবদান খালেদা জিয়ার। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, কারাবরণ করেছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। সর্বশেষ তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। আপনারা জানেন, দুই দিন ধরে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ জন্য আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে গণতন্ত্রের নেত্রী, গণতন্ত্রের মাতা খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির জন্য সারা দেশের জনগণের কাছে বাদ জুমা দোয়া চেয়েছি। আল্লাহ যেন তাঁকে সুস্থ করে দেন। সুস্থ অবস্থায় আবার জনগণের মধ্যে ফিরে এসে দেশের মানুষের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেন।’
খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনির জটিলতাসহ নানা ধরনের অসুস্থতায় ভুগছেন। গত রবিবার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রুত তাঁকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকরা জানান, খালেদা জিয়ার হার্ট ও ফুসফুসে ইনফেকশন দেখা দিয়েছে। এর আগে একাধিকবার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান। এক বার্তায় তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির সংবাদে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাঁর সার্বিক শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে আমরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখছি। আল্লাহ তাআলা যেন তাঁকে দ্রুত পূর্ণ সুস্থতা দান করেন।’
গত ২৩ নভেম্বর রাতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। তিনি বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।
এর আগে গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান খালেদা জিয়া। লন্ডন ক্লিনিকে টানা ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডনের ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নেন। যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসা শেষে দেশে ফেরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
তারেক রহমানের কৃতজ্ঞতা : খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে ড. ইউনূস যে বিবৃতি দিয়েছেন, সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত রাতে বিএনপির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দেশনেত্রীকে নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিবৃতিতে যে সৌজন্য ও মানবিক অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে, সে জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।’







