যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানপত্র পাঠাল বাংলাদেশ, লবিস্ট নিয়োগের সম্ভাবনা ক্ষীণ

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রস্তাবিত দ্বিপক্ষীয় চুক্তির খসড়া ও অবস্থানপত্র সে দেশে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আইন মন্ত্রণালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মতামতের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২২ জুলাই) এ অবস্থানপত্র পাঠানো হয়। পাশাপাশি তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু করতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে পুনরায় অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগের দিন সোমবারও একই অনুরোধ পাঠানো হয় বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘আমরা আশা করছি, শিগগিরই ওয়াশিংটনের ডাক পাব এবং সেখানে গিয়ে তৃতীয় দফার আলোচনা শুরু করব।’ তিনি আরও বলেন, এই দফার আলোচনায় দেশের স্বার্থ আদায়ের বিষয়ে সরকার আশাবাদী।

এর অংশ হিসেবে গতকাল তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ)-এর সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করেন। এএএফএ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও জুতা আমদানিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্ব করে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইউএসটিআরের সঙ্গে সম্ভাব্য আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে শুল্ক, শ্রম অধিকার, পরিবেশ, অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা ও নিরাপত্তা। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি থাকছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে থাকা বাণিজ্য ঘাটতি কিছুটা হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন:  তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেশি দূরে ছিল না: ট্রাম্প

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসে। পরে ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক চিঠিতে জানান, ওই শুল্কহার সাময়িকভাবে কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হয়েছে।

তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকার প্রয়োজনীয় গতি দেখায়নি বলে অভিযোগ করেছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আলোচনা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং দুই দেশ প্রায় শতভাগ বিষয়ে একমত হয়েছে।

‘অবস্থানপত্রে কী আছে’—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘এখনই কিছু বলা যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া ও বাংলাদেশের অবস্থান—এ নিয়েই মূলত আলোচনা হবে।’ এর আগে গত ১৭ জুন ও ৯ থেকে ১১ জুলাই পর্যন্ত দুই দফায় আলোচনা হলেও কোনো সমঝোতায় পৌঁছানো যায়নি।

আরও পড়ুন:  একদিনের ব্যবধানে আবারও বাড়লো স্বর্ণের দাম

প্রথম দফার আলোচনা শুরুর আগে গত ১২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ, যার ফলে সরকার এককভাবে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর এই আলোচনায় যুক্ত হন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা লুৎফে সিদ্দিকী ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, মূল দায়িত্ব এ মন্ত্রণালয়ের হওয়া সত্ত্বেও এভাবে আলাদা উদ্যোগ নেওয়ায় কিছুটা সময় নষ্ট হয়েছে।

তবে চলতি মাসের ৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে শুল্ক সংক্রান্ত আলোচনায় সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। বর্তমানে তিনিই আলোচনার নেতৃত্বে রয়েছেন।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বার্ষিক সাত লাখ টন গম আমদানির লক্ষ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া তুলা, সয়াবিন তেল ও এলএনজি আমদানির ক্ষেত্রেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন:  কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিভাগ ভেঙে দিতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে অনিশ্চয়তা

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পক্ষে কার্যকর লবিংয়ের বিষয়ে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমরা লবিস্ট নিয়োগ করতে চাই। প্রক্রিয়া শেষ হতে সাত দিন লাগতে পারে। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) এতে সহায়তা করছে।’

তবে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রির (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল-আলম চৌধুরী বলেন, ‘লবিস্ট কোনো একটি সংগঠনের হয়ে নয়, দেশের পক্ষে কাজ করবে। এজন্য সরকারের অনুমোদন প্রয়োজন। কিন্তু এনডিএ থাকার কারণে সরকার তা চায় না। ফলে এ বিষয়ে খুব একটা আশাবাদী হওয়ার সুযোগ নেই।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *