সাবিনা ইয়াসমিনের বাসায় ফেরা নিয়ে যা জানালেন মেয়ে বাঁধন

দুই দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফেরার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের। আগামীকাল তার বাসায় যাওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে সংগীতশিল্পী ইয়াসমিন ফায়রুজ বাঁধন।

তিনি সমকালকে বলেন, ‌‌‘আম্মুর অবস্থা এখন ভালো। তার শারীরীক তেমন জটিলতা নেই। ডাক্তাররা এখন পর্যন্ত ইতিবাচকই বলছেন। আগামীকাল তার বাসায় ফেরার কথা রয়েছে।

দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর গত শুক্রবার গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন সাবিনা ইয়াসমীন। সোয়া এক ঘণ্টা গানও গেয়েছিলেন। আমন্ত্রিত দর্শক-শ্রোতারা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন সেই গান। এর মধ্যে হঠাৎই মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়েন শিল্পী। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের একটি হাসপাতালে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাতে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।

আরও পড়ুন:  প্রসঙ্গ কোটা: ছাত্রদের ঘরে ফেরার আহবান বেলাল বেগের

তবে ভোরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে তাকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন। সেই হাসপাতালেই এখন আছেন শিল্পী।

প্রসঙ্গত সাবিনার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায়। পৈতৃক নিবাস সাতক্ষীরায়। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবারে। বাবা লুতফর রহমান ও মা মৌলুদা খাতুনও গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সাবিনার পাঁচ বোনের মধ্যে ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিনও গানের জগতের মানুষ।

সংগীতের সঙ্গে সাবিনার বসবাস ছয় দশকের বেশি সময় ধরে। মাত্র সাত বছর বয়সে প্রথমবার স্টেজে গান করেছেন সাবিনা; ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম গান করেন। ১৯৬৭ সালে প্রথম প্লেব্যাক করেন আমজাদ হোসেন ও নুরুল হক বাচ্চু পরিচালিত ‘আগুন নিয়ে খেলা’ সিনেমায়। এরপরের ইতিহাস কবেল জয় এবং সাফল্যের।

আরও পড়ুন:  যৌন হেনস্তার অভিযোগ,যা জানালেন মোনালি

ভারতের প্রখ্যাত সুরকার আর ডি বর্মণ, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, সত্য সাহা, সুবল দাস, আলম খান, বাপ্পি লাহিড়ী, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের মত সুরকারদের সুরে অসংখ্য চলচ্চিত্রের গান কণ্ঠে তুলেছেন তিনি।

সহশিল্পী হিসেবে, শ্যামল মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, কুমার শানু, আশা ভোঁসলের মত শিল্পীকে পেয়েছেন তিনি। দশ হাজারেও বেশি গান কণ্ঠে তুলেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। গীতিকার নয়ীম গহরের লেখা ও সুরকার আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া দেশাত্মবোধক গান ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেছিল।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়ে সব শ্রেণির শ্রোতাদের মাঝে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন সাবিনা ইয়াসমিন।

আরও পড়ুন:  একাত্তরে পা দিলেন কিংবদন্তি শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন

সংগীতে অবদানের জন্য ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *