জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পাস

বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সফলভাবে মোকাবলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য সামনে রেখে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গত ৬ জুন জাতীয় সংসদে ‘টেকসই উন্নয়নের পরিক্রমায় স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রা’ শ্লোগান সম্বলিত এই বাজেট পেশ করেন।

আজ রোববার বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৯টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মজ্ঞুরি দাবিগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।

এসব মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে বিরোধীদলের ৬ জন সংসদ সদস্য মোট ২৫১টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে আইন ও বিচার বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় খাতে ৩টি মজ্ঞুরী দাবিতে আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর স্বতন্ত্র ও বিরোধী দলের সদস্যরা আলোচনা করেন।

পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।

ছাঁটাই প্রস্তাবে আলোচনা করেন জাতীয় পার্টির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, স্বতন্ত্র সদস্য হামিদুল হক খন্দকার, পংকজ নাথ, আবুল কালাম ও নাসের শাহরিয়ার জাহেদী।

এরপর সংসদ সদস্যরা টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।

আরও পড়ুন:  ‘বুয়েটে জঙ্গিবাদ প্রশ্রয় দেয়া হলে ব্যবস্থা নেবে সরকার’

এর আগে গতকাল ২৯ জুন সংসদে অর্থ বিল-২০২৪ পাসের মাধ্যমে বাজেটের আর্থিক ও কর প্রস্তাব সংক্রান্ত বিধি-বিধান অনুমোদন করা হয়।

এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৬১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআর বহির্ভূত ১৫ হাজার কোটি টাকা কর ব্যতিত প্রাপ্তি ৪৬ হাজার কোটি টাকা।

সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। যা জিডিপি’র ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেটে ঘাটতি ছিল জিডিপি’র ৫ দশমিক ২ শতাংশ।

এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক ঋণ থেকে ৯৫ হাজার ১শ’ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা আহরণ করা হবে। বৈদেশিক ঋণের মধ্যে ঋণ পরিশোধ খাতে ৩৬ হাজার ৫শ’ কোটি রাখা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ১৫ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা, ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে ২৩ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে ৮ হাজার কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা  হয়েছে।

আরও পড়ুন:  বৈশ্বিক সংকটকালে এ বাজেট বাস্তব-গণমুখী: কাদের

বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। যা মোট বরাদ্দের ২৫.৯২ শতাংশ; এর মধ্যে মানবসম্পদ খাতে (শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য খাত) বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। ভৌত অবকাঠামো খাতে ২ লাখ ১৬ হাজার ১১১ কোটি টাকা বা ২৭.১২ শতাংশ; যার মধ্যে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ৯৫ হাজার ২৮৩ কোটি; যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে ৮০ হাজার ৪৯৮ কোটি এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:  ইউনিয়ন পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে বিল পাস

সাধারণ সেবা খাতে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৭০১ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২১.১৭ শতাংশ। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি), বিভিন্ন শিল্পে আর্থিক সহায়তা, ভর্তুকি, রাষ্ট্রায়ত্ত, বাণিজ্যিক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের জন্য ব্যয় বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮৩ হাজার ৫৪৩ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১০.৪৮ শতাংশ; সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১৪.২৪ শতাংশ; নিট ঋণদান ও অন্যান্য ব্যয় খাতে ৮ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বরাদ্দের ১.০৮ শতাংশ।

বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *