ওপারে ফের গুলি-মর্টার শেলের শব্দ, এপারে আতঙ্ক

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু ও কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে আজ শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) হঠাৎ করে আবারও গোলাগুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনা গেছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে জান্তাবাহিনীর হেলিকাপ্টার থেকে এসব গুলি ছোঁড়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এতে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এপারে। 

গুলির শব্দে ক্ষেতে কাজ করা কৃষক ও দিনমজুররা দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরেছেন। এ অবস্থায় তুমব্রু ও হোয়াইক্যং সীমান্তের বাসিন্দাদের মাঝে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। তবে উখিয়া সীমান্ত এখনও শান্ত রয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে মিয়ানমারের আরকান রাজ্য শিগগিরই জান্তাবাহিনী থেকে মুক্ত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) এক বিবৃতিতে এ ঘোষণা দিয়েছে তারা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নারিনজারা নিউজ এই তথ্য জানিয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার হামলা চালানো হয় বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে। যদিও এরই মধ্যে আরকান রাজ্যের অনেকাংশ আরাকান আর্মি (এএ) দখল করে নিয়েছে।

আরও পড়ুন:  বান্দরবানে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকে ডাকাতির ঘটনায় চার মামলা

তথ্যমতে, বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চৌকিগুলো বিদ্রোহীদের দখলে যাওয়ায় জান্তাবাহিনীর সদস্যরা মংডুর দিকে পালিয়েছে। আর বিদ্রোহীরা এসব এলাকা দখলে নিয়ে মংডু শহর দখলে নিতে সেদিকে ছুটছে। এতে সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষ অনেকাংশ কমে আশায় গুলির শব্দ কমছে। ফলে কয়েকদিন ধরে সীমান্তে স্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক কেটে গিয়েছিল। কিন্তু আজ সকাল থেকে হঠাৎ করে থেমে থেমে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু এবং টেকনাফের হোয়াইক্যং ঝিমংখালী সীমান্তে আবারও গুলি ও মর্টার শেলের শব্দ শোনতে পায় স্থানীয়রা। ফলে নতুন করে আবারও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে তাদের মনে।

cox-7

স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিদ্রোহীদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোঁড়ে জান্তাবাহিনী। সেই গুলির শব্দ ভেসে আসে এপারে।

আরও পড়ুন:  জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে আরও ২ জনের মৃত্যু, আশঙ্কাজনক অবস্থায় ৬

তুমব্রু নদীর ধারে শীতকালীন সবজি ক্ষেতে কাজ করা কৃষক আবদুল জব্বার বলেন, ‘গুলির শব্দ ভেসে আসার পর আমরা মাঠে ছেড়ে দ্রুত বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। তবে বিকালের পর আর গুলির শব্দ শুনিনি। তারপরও আমাদের মনে আতঙ্ক রয়ে গেছে।’

আরেক কৃষক জামাল হোসেন বলেন, ‘যদি মিয়ানমার সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়—তবে কি করবো, তা বুঝতে পারছি না। ফসলের ক্ষতি তো আর পুষিয়ে উঠতে পারবো না।’

বাইশফাঁড়ি সীমান্তের বাসিন্দা মো. এরশাদ বলেন, ‘দুই-তিনদিন ধরে গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি। এতে অনেকটা ভয়হীন ছিলাম আমরা। কিন্তু শুক্রবার আবারও গুলির শব্দে আতংকিত হয়ে পড়েছি।’

স্থানীয় সংবাদকর্মী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সকাল থেকে মূলত থেমে থেমে গুলির শব্দ আসছে। তবে সীমান্তের কাছের লোকজন বলছেন, হেলিকপ্টার থেকে বিদ্রোহীদের লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *